IND VS SA: অপ্রতিদ্বন্দ্বী হেসে খেলে আটে ৮, অঘটন না ঘটলে বিজয়ের পথে ভারত

0

Last Updated on November 6, 2023 12:36 AM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। ক্লাসের ফার্স্ট আর সেকেন্ড বয়ের মধ্যে পার্থক্য কতটা? ক্লাসে পরীক্ষার খাতায় সামান্য হলেও, ইডেনে বিশ্বকাপের ফার্স্ট আর সেকেন্ড বয়ের পার্থক্য দাড়াল ২৪৩ রানের। বিশাল ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য রইল টিম ইন্ডিয়া। ম্যাচের প্রথম পর্ব যদি কোহলির হয়, ইন্টারভ্যালের পরের অংশ জাদেজার। কোহলির ক্লাসিকাল ধৈর্য্যশীল শতরানের পরেই রবীন্দ্র জাদেজার ম্যাজিকাল স্পিনে দুমড়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ইডেনের সন্ধ্যের নায়ক জাদেজা। ২৭ ওভারে ৮৩ রানে মুড়িয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

দৃশ্য ১
রাবাডার গুড লেন্থ বলটা খানিক কোনাকুনি ছেড়েছিলেন। সামনের পায়ে শরীরের ভার ছেড়ে,সামান্য ব্যাক লিফটে নেমে এল ব্যাট। আর মন্ত্রমুগ্ধের মত বলটা কোহলির কাশ্মীর উইলোর মাঝ বরাবর ছুঁয়েই বাধ্য ছেলের মত কভারের দিকে ছুটল। আর গোটা ইডেন উঠে দাড়ালো। বেজে উঠল শঙ্খ, গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে ৮০ হাজার মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বলে উঠলো। তিনি শতরান ছুঁলেন। স্পর্শ করলেন শচীন টেন্ডুলকরের ৪৯ তম শতরানের দেবোত্তর সম্পত্তিকে। ৩৫ তম জন্মদিনে কলকাতাকে রিটার্ন গিফট দিলেন কিং কোহলি। জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে দলের স্কোর পৌঁছে দিলেন ৩২৬ রানে। জয় শাহ চাননি তো কি এসে গিয়েছে, কলকাতা তার নিজের মত করেই কিং কোহলির শয়তান উদযাপন করল স্টেডিয়ামে। তাঁর প্রতিটি রানে এসেছে জয়ধ্বনি।

দৃশ্য ২.
প্রোটিও অধিনায়ক ভাবুমার অফ স্ট্যাম্প ছুঁয়ে গেল জাদেজার টপস্পিন। আবার ধাক্কা দিলেন জাদেজা। এবার ক্লাসেন। ১২ ওভারের মাথায় ক্লাসেনের পা লেগ স্ট্যাম্পের সামনে পেয়ে গেল জাদেজার বল। মিলারের উইকেট নাড়িয়ে এল তৃতীয় উইকেট। জেনসন মিস টাইমিং করলে এল চার নম্বর। তারপরেই রাবাডাকে সামনের পায়ে এনে হতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন,এলো পঞ্চম উইকেট।
দুপুর থেকেই ইডেনের আজ উত্তেজনার সব মশলা মজুত ছিল। ৭০ হাজার ক্রিকেট পাগল দর্শকদের ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া সমবেত চিৎকার প্রায় ধর্মতলা থেকে শোনা যাচ্ছিল। গান্ধী মূর্তির পাদদেশ থেকে ইডেনের আগ পর্যন্ত দেদার বিকোচ্ছে ভারতের জার্সি। রোহিত, কোহলি, শুভমনের মুখোশ। মুখে রং দিয়ে পতাকা আঁকার বিশাল লাইন চার নম্বর গেট থেকে গোষ্ঠ পালের মূর্তি পর্যন্ত পৌঁছেছে। এমন ক্রিকেট উন্মাদনার শহর ছেড়ে কেন গুজরাটে প্রায় সব ম্যাচ হচ্ছে, ভেবে অবাক বিদেশি দর্শকরা। খেলা শুরু হওয়ার চার মিনিটের মধ্যেই দর্শক আবেগের বারুদ স্তুপে অগ্নিসংযোগ করে দিল রোহিতের কপিবুক প্রথম কভার ড্রাইভ। বাউন্ডারির দড়ি ছুঁতেই আবেগের বিস্ফোরণ।

ইডেনে টস জিতে ব্যাটিং নেয় ভারত। হার্ড বাউন্সি পিচে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন রোহিত। রোহিত আর শুভমনের উইলো কাঠের শাসনে মাত্র ৪ ওভার পাঁচ বলেই ৬১ রানে পৌঁছে যায় ভারত। ২৪ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে রবাডার বলে শর্ট কভারে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেও, ইডেনের উন্মত্ততা কমেনি এক চুল। কারণ ইডেনের আসল আকর্ষণ ব্যাট হাতে কোহলি ড্রেসিংরুমে দাড়ানো,সেটা বড় পর্দায় অনেক বার দেখা হয়েছে। কভারে এবং লেগে দুরন্ত চার মেরে খাতা খুললেন কোহলি। ১০ ওভারের মাথায় আবার ছন্দপতন। ফর্মে থাকা শুভমন কেশব মহারাজের আপাত নিরীহ বলার লাইন মিস করে ২৩ রানে ফিরলেন। পিচ একটু স্লো হয়ে উঠছে, তখন ১১ ওভারে শতকের কাছাকাছি ভারতের স্কোর। এবার শ্রেয়াস আর কোহলির ওপর গুরু দায়িত্ত্ব। তাদের ১৩৪ রানের ইনিংসটা ভারতকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিল। ৩৮ ওভারে ২৩৫ রানে দলকে পৌঁছে দিয়ে ৮৭ বলে ৭৭ রানের অতি গুরুত্বপূর্ন ইনিংস খেলে শ্রেয়স প্যাভেলিয়নে ফিরলেন। এবার কোহলির উল্টোদিকে রাহুল। যদিও ব্যক্তিগত ৮ রানের মাথায় রাহুল ফিরলেন। রানের গতি সেভাবে বাড়ছিল না। ডি কক উইকেটের পিছনে উড়ন্ত ক্যাচ ধরে সূর্যকুমারকে মাত্র ২২ রানে ফেরত পাঠান। জাদেজা স্বাভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই ব্যাট চালালেন। ১৫ বলে ২৯ করে রান পৌঁছে দিলেন ৩২৬ এ।

ইডেনের পিচে ৩২৬ রান তাড়া করে জেতাটা সহজ কাজ নয়। সেটা জেনেই নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুরন্ত ফর্মে থাকা ডি’ককের স্ট্যাম্প উড়িয়ে প্রথম ধাক্কা দিলেন সিরাজ। আট ওভারেই দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে বেগ দিতে বাহাতি জাদেজাকে নিয়ে এলেন রোহিত। হাতে নাতে ফল এল। প্রোটিও অধিনায়ক ভাবুমার অফ স্ট্যাম্প ছুঁয়ে গেল জাদেজার টপস্পিন। পিচে একটু বল স্কিড করছিল। এবার সামির পালা। আরেক মারকুটে মাকারামকে লেট সুইংয়ে বোকা বানালেন আগের ম্যাচে পাঁচ উইকেটের মালিক সামি। ১১.৫ ওভারে ৩৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আবার ধাক্কা দিলেন জাদেজা। এবার ক্লাসেন। ১২ ওভারের মাথায় ক্লাসেনের পা লেগ স্ট্যাম্পের সামনে পেয়ে গেল জাদেজার বল। তখন দ আফ্রিকা ৪০/৪। পরের ওভারেই আবার ধাক্কা। আবার সামি। ভেতরে ঢুকে আসা বলের লাইন মিস করে ডুসেন ফিরলেন শূন্য রানে। এবার ৪০/৫। যখন খানিক ভরসার মিলারের উইকেট উড়িয়ে জাদেজা তার তৃতীয় উইকেটটা তুলে নিলেন তখন ৫৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিশ্বকাপের সেকেন্ড বয়দের দমবন্ধ অবস্থা। পরের ওভারেই জাদেজা ফেরালেন কেশব মহারাজকে। ৬৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন কোমায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যক্তিগত ১৪ রানে জেনসনকে ফেরালেন কুলদীপ। ৭৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে তখন প্রোটিওদের
গুটিয়ে যাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। বাকি কাজটা করে দিলেন কুলদীপ। ৮৩ রানে শেষ হল দক্ষিণ আফ্রিকার যাত্রা।