Dev Mithun Chakraborty : মিঠুন যখন বললেন “দেবকে ওরা ভয় দেখাচ্ছে” তখন তৃণমূলের নির্বাচিত সাংসদ দেব কেন প্রতিবাদ করেননি?

0

Last Updated on January 19, 2023 7:38 PM by Khabar365Din

পূষন গুপ্ত

সম্প্রতি প্রজাপতি ছবি নিয়ে কিছু রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সিনেমাটি নিয়ে কোন বিতর্ক হয়নি। সিনেমাটি বিতর্ক হওয়ার মতন বিষয়ও নয়। বিতর্ক হয়েছে প্রযোজক দেব (Dev) যিনি তৃণমূলের সংসদ এবং প্রধান অভিনেতা। এবং মিঠুন চক্রবর্তী () যিনি ভাজপার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য (BJP National Executive Council Member )।

তাঁদের দুজনের অবস্থান নিয়ে। মিঠুন গত বিধানসভার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ভাজপার পতাকা গ্রহণ করে এবং তৃণমূল নেতৃত্বকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করে নিজের ভাজপা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।

উনি এ ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস তা আমাদের জানা নেই। কারণ এর আগে তিনি ১০-১২ টি রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করেছেন এবং সর্বত্রই কিছুদিন করে থেকেছেন।

ওনার প্রয়োজন ফুরোনো মাত্রই দলের প্রয়োজনও ওনার কাছে ফুরিয়ে গেছে। ভাজপার ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য মিঠুন এটা জানেন কিনা জানিনা বা মিঠুনের গুরুত্ব বোঝেন কিনা তাও আমরা জানিনা।

কিন্তু ধরে নেওয়া যেতে পারে যে মিঠুন কেন্দ্রীয় ভাজপা দলের অনুমোদন ক্রমেই বাংলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতু এতটাই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে তাই দেবের প্রজাপতি সিনেমায় অভিনয় করা নিয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠেছে।

প্রশ্ন গুলি করেছেন এর আগে তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তারপরে দেব এবং মিঠুনের কাছ থেকে কিছু প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এই প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে আমি আরো কয়েকটি প্রশ্ন করছি।

প্রশ্ন ১.

দেব কেন মিঠুনকে নিলেন যেকোনও প্রযোজক যে কোনও অভিনেতাকে নিতেই পারেন। আমাদের রাজ্যে এ ব্যাপারে একটি অনন্য নজির তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। শিল্প ও শিল্পীকে সম্মানে ব্যাপারে তিনি রাজনীতিকে গুরুত্ব দেন না। তার হাত থেকে বঙ্গ পুরস্কার নিয়েছেন এমন কয়েকজন, যারা এই রাজ্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন, অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরাও। বর্তমানে অরিন্দম শীল ভাজপা প্রার্থী রুদ্রনীলকে নিয়েও সিনেমা করছেন। তাতেও কোনও অসুবিধা হয় না। অসুবিধা হয় তখনই যখন বিধানসভা ভোটের আগে অভিনেতার মুখোশ পরে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করার পরেও তাকে লাল কার্পেট পেতে শুধু সিনেমায় নয়, রাজ্যজুড়ে প্রোমোশনের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন দান করেন তৃণমূলের সাংসদ-অভিনেতা-প্রযোজক দীপক অধিকারী (দেব)। গত বিধানসভা ভোটে যে অভিনেতা কাম নেতাটি সুপারফ্লপ করেছেন তাকে সিনেমার মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে ক্যাটালিস্টের (অনুঘটক) কাজ করলেন শ্রী দেবকুমার। এখন এই অপকর্মটি ঢাকতে তিনি প্রথমে বললেন, ‘আর কাকে নেব বলুন মিঠুনদাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এই চরিত্রে। ’দেব অভিনেতা হিসেবে কী বোঝেন সে সম্পর্কে আমার সন্দেহ আছে। দেব যে মিঠুনবাবুকে বিশ্বের সেরা অভিনেতা মনে করবেন সেটাই স্বাভাবিক। প্রযোজক দেব তার ছবি দেব বাণিজ্যিক সফল করার জন্য যা খুশি তাই করতে পারেন। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ বা ‘শাঁখা দিও না ভেঙে’ বানাতেই পারেন। বানিয়ে তাকধুমাধুম বাজিয়ে নাচা গান করতেই পারেন যা দেব’এর পক্ষে স্বাভাবিক। তাতে ভারতীয় সিনেমার, বাংলা রুচিশীল সিনেমার, বাংলার রুচিশীল দর্শকদের কিছু যায় আসে না। প্রশ্ন সেখানেই যে এই সুপারফ্লপ, ভাজপার সেন্ট্রাল এক্সজিকিউটিভ সদস্যকে ঠিক পঞ্চায়েত ভোটের আগেই একটানা প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার জন্য শ্রী দেবকুমারকে কে অ্যাসাইন্টমেন্ট দিল। প্রশ্ন, তিনি কী এ ব্যাপারে পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অথবা পার্টির সর্বভারতীয় সম্পাদকের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে? শুধু তো সিনেমায় অভিনয় করে ছেড়ে দেননি, ভাজপার অন্যতম মুখকে তৃণমূল সাংসদ কাঁধে করে প্রচারের সর্বোচ্চ শিখরে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন প্ল্যানমাফিক। দলের অনুমতি ছাড়া এ কাজ করা যায় ? দলের শৃঙ্খলার কথা বাদ দিলাম। শ্রী দেবকুমারের নৈতিক অধিকার আছে কি? মনে রাখতে হবে তিনি অভিনেতা দেব বা প্রযোজক শ্রী দেবকুমার শুধু নন। তিনি বাংলার মানুষের ভোটে জিতে আসা জনপ্রতিনিধি, বাংলার মানুষের কাছে তিনি দায়বদ্ধ, বাংলার মানুষ তাকে এই যথেচ্ছাচার করার অধিকার দিয়েছে কি?

প্রশ্ন: ২।

মিঠুনের আক্রমণে দেব চুপ কেন?

এসব সিনেমার গল্প, রাজনীতি নয়, এসব বলে দেব কিছু মানুষকে বোকা বানাতে পারেন সবাই কে কি বানানো যায় ? সিনেমাই যদি হবে ‘প্রজাপতি’র পার্টিতে অভিনেতা, প্রযোজক এবং তৃণমূল সাংসদ দেব’এর পাশে দাঁড়িয়ে মিঠুন কোন সাহসে বললেন ওরা তো দেবকেও ভয় দেখাচ্ছে। (ওরাটা কে? শাসক দল তো? শাসক দল কে? তৃণমূল তো? তৃণমূলের সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে ভাজপার জাতীয় কমিটির সদস্য বলছেন, তৃণমূল দেবকে ভয় দেখাচ্ছে আর এই অভিযোগ তৃণমূলের সাংসদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন! কই প্রতিবাদ করলেন না তো, কই একবারও বললেন না তো মিঠুনদা যা বলছেন তার সঙ্গে একমত নই। কই বললেন না তো, মিঠুনদা রাজনীতি করবেন না, এটা সিনেমার মঞ্চ। আপনি বিনীত ব্যক্তিত্ব? মোটেই না। ভাজপার জাতীয় কমিটির সদস্য মিঠুনের কথার প্রতিবাদ না করলেও রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথার প্রতিবাদ করেছেন। তখন আপনার প্রতিবাদী চরিত্র জেগে উঠল কেন? আপনি কাকে বোকা বানাচ্ছেন? শ্রী দেব আপনার উদ্দেশ্য দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ও পরিষ্কার

বিশ্বাসঘাতকতা ও কৈফিয়ৎ তলব

বারাণসীতে শুটিঙের আপনার ইউনিটকে কে বা কারা স্বাগত জানিয়েছিল তা আমাদের বিষয় নয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া মিঠুনের ক্যারিশ্মা সারা বাংলায় ছড়িয়ে দেওয়ার যে দায়িত্ব নিয়েছেন তার পরেও পার্টি আপনাকে কোনও প্রশ্ন করবে কিনা, পার্টিকে আপনি জবাবদিহি করবেন কিনা, তৃণমূল পার্টিতে থাকবেন কিনা, সেসব আপনার আর দলের ব্যাপার। আমরা বাংলার মানুষের হয়ে সর্বশেষ একটাই প্রশ্ন করব। এটা কি তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত সাংসদের সিনেমার নাম করে রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা নয় ? এই মিঠুন পুজোর সঠিক কৈফিয়ৎ দেবেন কি মাননীয় সাংসদ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here