পুরভোটেও তৃণমূল ঝড়, পাহাড়ও হাতছাড়া ভাজপার, শুভেন্দু, অর্জুনের গড় কাঁথি, ভাটপাড়া চুরমার

0

Last Updated on March 2, 2022 8:13 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের রেশ ধরেই বাংলার ১০৮ পুরসভা নির্বাচনেও মানুষ ভরসা রাখলেন মমতাতেই। ১০২ পুরসভায় এখনো পর্যন্ত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পুরবোর্ড দখল করেছে তৃণমূল। ৪ পুরসভায় এখনো পর্যন্ত ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি থাকলেও তার মধ্যে একাধিক পুরসভায় তৃণমূলের দখলে আসতে চলেছে। তবে ২০১১ সালে বাংলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেও যেখানে উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভা কার্যত রং বদলানো ২ নব্য ভাজপা নেতা অর্জুন সিং এবং শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত ছিল, সেই ২ পুরসভাতেই এলাকার মানুষ ভাজপাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন দশক পরে প্রথমবারের জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল অধিকারী পরিবারের সাম্রাজ্য। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বাংলায় বাম-রাম জোটের আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত নদিয়ায় তাহেরপুর পৌরসভা দখল করল সিপিএম। তাহেরপুর পুরসভার ১৩ ওয়ার্ডের মধ্যে ৮ সিপিএম এবং ৫ ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে তৃণমূল।


এতদিনের অধরা সাফল্যও এবার পুরভোটে ঝুলিতে এল তৃণমূলের। এই প্রথমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর পুরসভায় এককভাবে বোর্ড গঠন করবে তৃণমূল। এতদিন জেলার অন্য পুরবোর্ডগুলি তৃণমূলের দখলে থাকলেও, একমাত্র বিচ্ছিন্ন ছিল জয়নগর। মূলত কংগ্রেস ও এসইউসিআইর শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত ছিল জয়নগর। এবার সেই গড়েরও দখল নিল তৃণমূল।

কাঁথিতে মুখ পুড়ল শুভেন্দুর

প্রায় সাড়ে তিন দশক পরে এবার এই প্রথমবার কান্দি পুরসভার নির্বাচনে অধিকারী পরিবারের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। তার পরেও কাঁথি পুরসভার নির্বাচনকে নিজের মুখেই প্রেস্টিজ ফাইট বলে দাবি করেছিলেন নব্য ভাজপা নেতা শুভেন্দু অধিকারী। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভাজপা শিবিরে যোগ দেওয়ার পরেই শুভেন্দু দাবি করেছিলেন একুশের রামনবমীর মধ্যেই নিজের পরিবারে পদ্ম ফোটাবেন। কিন্তু পদ্ম ফোটানো দূরের কথা কাঁথিতে শুকিয়ে গেল পদ্ম ফুল। প্রচারে বেরিয়ে বারে বারে শুভেন্দু অধিকারী আবেদন করেন, ঘরের ছেলেকে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে আশীর্বাদ করবেন। কিন্তু সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে হেরে গেলেন শুভেন্দু। আজ কাঁথি পুরসভার ১৭ ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ভাজপা জয় পেয়েছে ৩ ওয়ার্ডে। একটি ওয়ার্ডে অন্যান্যরা। কাঁথি উত্তরে তৃণমূলের রিনা দাসের কাছে হেরে যান ভাজপা বিধায়ক সুমিতা সিংহ। তার পরই গণনা যত এগোতে থাকে, ততই তৃণমূলের জয় নিশ্চিত হতে থাকে।

ভেঙে চুরমার অর্জুন সিং এর গড়

অর্জুন সিংয়ের গড় বলে পরিচিত ভাটপাড়া পুরসভাও দখল করল তৃণমূল। এখানে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে ভাজপা। ভাটপাড়ার ৩৩ ওয়ার্ডের মধ্যে ১ আসনে প্রার্থীর মৃত্যুর জন্য ভোট হয়নি। কিন্তু ৩২ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০ ওয়ার্ড দখল করেছে তৃণমূল। দুটি ওয়ার্ডের ফলাফল এখনও সামনে আসেনি। নিজের ওয়ার্ডে ভাজপা প্রার্থী না থাকায় ভোটই দিতে পারেননি অর্জুন সিং।

পাহাড় হাতছাড়া ভাজপার

এবারে পাহাড়ে শক্তিক্ষয়ের শুরু ভাজপার।দার্জিলিংয়ে খাতাই খুলতে পারল না তারা। মাত্র ৬ মাস আগে গঠিত হওয়া হামরো পার্টিই এবার দখল করল দার্জিলিং পুরসভা৷ এই মুহূর্তে পাহাড়ের সাংসদ, বিধায়ক সবই ভাজপার দখলে রয়েছে৷ কিন্তু ভাজপা-জিএনএলএফ জোটকে পিছনে ফেলে বাজিমাত করল অজয় এডওয়ার্ডের নতুন দল৷ তবে ভাজপা খাতা না খুলতে পারলেও দু’টি আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল৷ হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ড ছিলেন জিএনএলএফ সভাপতি মন ঘিষিংয়ের ঘনিষ্ঠ৷ বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না নতুন এই দল গঠন করেন তিনি৷ দার্জিলিং পুরসভায় হামরো পার্টি জয়ী ১৮ আসনে, বিজিপিএম জয়ী ৮ আসনে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জিতেছে ৪ আসনে এবং তৃণমূল জিতেছে ২ আসন।

কাজে এলোনা কুৎসা এবং চক্রান্ত

এবারের পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণের ঠিক আগেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক কুৎসা করার চেষ্টা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি হাওড়ার ছাত্র আনিসের মৃত্যুকে ঘিরে ও সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অশোভন আঁতাত তৈরি করে ভাজপা এবং সিপিএম মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল। শুধু তাই নয় বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের পাকিস্তানি এবং সন্ত্রাসবাদী বলা ভাজপা নেতা শুভেন্দু অধিকারী পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা সফল করার চেষ্টায় কাঁথির মুসলমান পাড়ায় গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে ভাজপাকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সে সব কিছুই কাজে দিলো না। তাই তৃণমূলের ব্যঙ্গ, সেই তো হেরে ভূত হলি! তবে কেন কুৎসা রটালি!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here