Last Updated on December 21, 2021 11:53 PM by Khabar365Din
পূষন গুপ্ত
বামের জোরেই রাম
আমি গত ২০১৮ সালের লোকসভা ভোটের আগে থেকে বলে আসছি বামরাম নামে এক অশুভ জোট তৈরি হয়েছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির নির্দেশে রাজ্যের সূর্যকান্ত-সুজন-সেলিম এই জোটের রূপকার। আমাদের চাপে নদিয়ার রমা বিশ্বাস প্রকাশ্যে এই জোটের কথা স্বীকারও করেছেন। যেহেতু আজও সিপিএমের একমাত্র শত্রু তৃণমূল, অবশ্যই ভাজপা নয়। যার ফলে ভাজপার ৭-৮ পারসেন্ট ভোটের সঙ্গে সিপিএমের ২৪ পারসেন্ট জুড়ে ফুলে ফেঁপে ১৮ সিট দখল করে সেবার। বাংলার মাটিতে ভাজপার এই বৃদ্ধি গণ সংগঠনের জোরে নয়, মোদির ম্যাজিক ক্যারিশমায় নয়, দেশজুড়ে ভাজপার বাড়বাড়ন্ত দেখে নয়, কোনও হিন্দুত্ব–ফিন্দুত্ব নয়, স্রেফ সিপিএমের ভোটের জোরে। মনে রাখতে হবে বাংলার মানুষের কাছে এখনও প্রভু রামচন্দ্রের থেকে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের ছবি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। প্রতারক সিপিএমকে ছেড়ে বাংলার মানুষ গরিবের ভগবান মমতাকে বেছে নেওয়ার কারণ একটাই, মমতা ওদের থেকে অনেক বেশি বামপন্থী। বাঙালির কাছে আজও হনুমান চালিশার থেকে ১০০ গুণ বেশি গুরুত্ব সঠিক বামপন্থায়। বলতে চাইছি, বাংলায় ভাজপার বৃদ্ধি ঘটেছে কেবল সিপিএমের মদতে। গত বিধানসভায় অনুরূপ ঘটনা ঘটায় সিপিএম বামের ভোট রামে ফেলে নিজেরা শূন্য হয়। শুধু এবার অ্যাজেন্ডা সফল হল না, কারণ একদিকে দেশনেত্রী মমতা ও তার সুযোগ্য সহযোগী অভিষেকের নেতৃত্ব, অন্যদিকে হিন্দিভাষী অবাঙালি ভাজপার প্রতি আপামর বাঙালির চরম ঘৃণা বিদ্বেষ ওদের ৭৭’এ আটকে দিল। গোটা আলিমুদ্দিন গোঁফে তেল দিয়ে ডন বৈঠক করছিল। আগে তো মমতা যাক তারপরে রামকে বুঝে নেব। রাম তো ইজি টার্গেট। পুরভোটে সম্বিত ফেরে সিপিএমের এবার তো পাড়ার ভোট। কাউন্সিলর হওয়ার লড়াই। আপ্রাণ লড়েছে এবার সিপিএম রাম থেকে বামে ভোট ফেরাতে। কিন্তু এ তো হাতের মোয়া নয়, দিলাম আর পরে কেড়ে নিলাম। সুইচিং মেশিনারিতে রিভার্স প্রক্রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাটে না। বামরাম জোট মানে সুইসাইড তা এত দিনে বুঝল আলিমুদ্দিন, তা আশা করি। ঠেলেঠুলে অধিকাংশ জায়গায় ২ নম্বরে উঠেছে বটে কিন্তু সিপিএমের সিট একটা। লোকসভা ভোট থেকে ধরলে রেজাল্ট ০-০-১। কিন্তু পাশাপাশি বারবার বলে যাওয়া তত্ত্বটা মিলে গেল। ভাজপা বামের ভোট সরে যাওয়া মাত্র পুনমূষিক ভব। তিনটি সিটের মধ্যে দুটি বড়বাজারে, একটি নড়বড়ে সজল ঘোষ। এক লহমায় হিন্দুত্ব ভ্যানিশ, রামমন্দির ভ্যানিশ, হনুমান চালিশা ভ্যানিশ, জয় শ্রীরাম ভ্যানিশ, মোদি ম্যাজিক ভ্যানিশ, শাহর হুঙ্কার ভ্যানিশ। গুটখ ↑ মুখে করুণভাবে পড়ে রইল অবাঙালি বড়বাজারের পার্টি ভাজপা।
সুইচিং মেশিনারি
প্রায় ৮০ আসনে সিপিএম দ্বিতীয়স্থানে উঠে এলেও একটার বেশি সিট বার করতে পারল না। প্রথমের সঙ্গে দ্বিতীয়ের বিশাল ব্যবধান। কারণ দুটি, প্রথমত মমতার সংগঠন, আদর্শ ও নেতৃত্ব সিপিএমের থেকে এত বেশি গুণ এগিয়ে গেছে তা আজ আর ওদের পক্ষে ধরাছোঁড়ার বাইরে। অস্বস্তি রক্ষাও বিপর্যস্ত, অপ্রাসঙ্গিক। গরিব, মধ্যবিত্ত কেউই বিশ্বাস করে না সিপিএমকে। দ্বিতীয়ত, বৈজ্ঞানিক রিগিং এবং ভোট সুইচিং অপারেশনে দক্ষ সিপিএম কখনও ভেবে দেখেনি বামের ভোট ফেরাতে হতে পারে। একদা দমদমে লোকসভা ভোটে (বাংলায় ভাজপা তখন শিশু মাত্র) সিপিএমের অমিতাভ নন্দীকে হারাতে পার্টির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এত তীব্র হয়ে ওঠে যে সুভাষ চক্রবর্তীকে একাংশ নির্দেশ দেয় অমিতাভকে হারাও। পার্টিতে ভোট সুইচিং অপারেশন হয়, অমিতাভ নন্দীকে হারিয়ে তপন শিকদার জেতেন। মনে রাখতে হবে দমদমে যত ভোট রামে গিয়েছিল সিপিএম শতচেষ্টা করেও তার সবটা বামে ফেরাতে পারেনি। ভোট সুইচিং ওয়ান ওয়ে অপারেশন। বুঝলেন কমরেড?
টুম্পা সোনারা ব্যর্থ
অভিষেকের অপ্রতিহত নেতৃত্ব দেখে হিংসে এবং আতঙ্কে জ্বলে পুড়ে মরা আলিমুদ্দিন টুম্পা সোনাদের নামিয়ে ভোটদাতাদের নতুন মেনু সার্ভ করবে ভেবেছিল। রেড ভলেন্টিয়ার না কী যেন হাবিজাবি নাম দিয়ে। একজনও জেতেনি। পাশাপাশি তারক সিংয়ের পরিবার, শশী পাঁজার কন্যা, চন্দ্রিমার ছেলে, তৃণমূলের ইয়ং ব্রিগেড ১০০ ভাগ সফল। কিছু বয়স্ক পুরোনো আদর্শবাদী মাস্টারমশাইদের খুঁজে বার করবে তারও পায় নেই। তাঁরা সবাই বিকল্প মমতাকে বেছে নিয়েছেন। আদর্শহীন ফেসবুক জেনারেশন দিয়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়া যায় না, বুঝলেন তো কমরেড?