JU Swapnadeep kundu: JU-র আরও দুই ছাত্র গ্রেফতার , ক্যাম্পাস থেকে হঠাৎ চুরি ৪ মোবাইল ২ ল্যাপটপ

0

Last Updated on August 13, 2023 5:09 PM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলে ছাত্র স্বপ্নদ্বীপ কুন্ডুকে হত্যার ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরীর পরে এবারে আরো দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করলো, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। প্রথমে গ্রেপ্তার হওয়ার সৌরভ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা যে কয়েকজনের নাম পেয়েছেন তাদের মধ্যে থেকে আজ ভোরবেলা গ্রেফতার করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষকে। দীপশেখর যাদবপুরের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও মনোতোষ সমাজবিদ্যার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এরা সকলেই দীর্ঘদিন ধরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল এবং ক্যাম্পাসে নবাগত ছাত্রদের র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় যুক্ত ছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে দীপশেখর দত্তর বাড়ি বাঁকুড়ায় এবং মনোতোষ ঘোষের বাড়ি আরামবাগে।

জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার বাসিন্দা ১৯ বছরের দীপশেখর দত্ত যাদবপুরে অর্থনীতির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা ২০ বছরের মনোতোষ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছে। দুজনেই ফোরাম ফর আর্টস স্টুডেন্টসের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীরা জেরায় জানতে পেরেছেন স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর ফেসবুক থেকে সব পোস্ট মুছে ফেলেছিল মনোতোষ। মনোতোষ স্বপ্নদীপের ঘরে থেকে তার উপরে মানসিক চাপ তৈরি করত বলে জানা গিয়েছে। সৌরভ চৌধুরী এবং মনোতোষের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন স্বপ্নদীপের বাবা। জানা গিয়েছে, আগেই গ্রেফতার হওয়া সৌরভ চৌধুরীই প্রথম স্বপ্নদীপকে হস্টেলে জায়গা পাইয়ে দেবে আশ্বাস দিয়েছিল স্বপ্নদ্বীপের বাবাকে। তারপরেই সৌরভের নির্দেশে তার সাগরেদ বলে পরিচিত মনোতোষের রুমে নাকি প্রথমে গেস্ট হিসেবে জায়গা দেওয়া হয়েছিল স্বপ্নদ্বীপকে।

ক্রোনোলজি সমঝো

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে র‌্যাগিংয়ের পরম্পরা দীর্ঘকালের। জানা গিয়েছে, এতটাই সিস্টেম্যাটিক ছিল যে, নবাগত ছাত্রদের কীভাবে আগে র‌্যাগিং করা হয়েছে এবং নির্দেশ না মানলে ফল কী হবে, তার ছবি ও ভিডিও দেখানো হতো নবাগতদের। সেই সমস্ত ছবি ও ভিডিও সম্বলিত চার মোবাইল ও ২ ল্যাপটপ। মেইন হোস্টেলে যাদবপুরের ফিজিক্যাল এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট-এর স্টুডেন্টদের রুম থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক জিনিস চুরি গিয়েছে আজ ভোরবেলা।

কতজন জড়িত স্বপ্নদ্বীপ হত্যাকাণ্ডে

স্বপ্নদ্বীপ কুন্ডুর রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ যে ঝাঁপ দিয়ে নয় বরং র‌্যাগিংয়ের ফলে – তা নিয়ে আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা। কিন্তু গোটা ঘটনার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ বা ডিজিটাল এভিডেন্স না থাকায় পুলিশকে প্রাথমিকভাবে সারকামস্টেন্সিয়াল এভিডেন্স এর উপরে নির্ভর করেই তদন্ত এগোতে হচ্ছে। তবে প্রথমেই এই ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড সৌরভ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করার পরে গতকাল তাকে হেফাজতে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। হোস্টেলের অন্যান্য বেশ কয়েকজন নবাগত আবাসিকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সৌরভকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালানোর পরে বেরিয়ে আসে আজ সকালে গ্রেফতার হওয়া দুই ছাত্রের নাম। তবে জানা গিয়েছে স্বপ্নদ্বীপকে হত্যার সময় বা স্বপ্নদ্বীপের রহস্যজনক মৃত্যুর সময় ঘটনাস্থলে এই তিনজন ছাড়া আরও অন্তত ৪/৫ জন উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে সৌরভের মতো বহিরাগত প্রাক্তনীর সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান ছাত্ররাও ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

আবাসিকদের মোবাইলের ফরেন্সিক টেস্ট

শুধু তাই নয় দীর্ঘক্ষন ধরে স্বপ্নদ্বীপকে উত্যক্ত করে তার মৃত্যু ঘটা পর্যন্ত ঠিক কি কি ঘটনা ঘটেছিল এবং সেই সময়ে উপস্থিত আবাসিক ও প্রাক্তনীরা কেউ নিজেদের মোবাইলে কোন ভিডিও রেকর্ডিং করেছিল কিনা তা জানার জন্য সন্দেহভাজন আরো বেশ কয়েকজন ছাত্রের মোবাইলের ফরেন্সিক টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তদন্তকারীরা। এমনকি সৌরভ চৌধুরী মনোতোষ এবং দীপশেখরের মোবাইলের ফরেন্সিক টেস্ট করে দেখা হবে সেদিন স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যুর ঠিক এক ঘণ্টা আগে থেকে সকাল পর্যন্ত তারা কাকে কাকে ফোন করেছিল এবং কোন ভিডিও ও ছবি ডিলিট করে দিয়েছে কিনা।

তথ্য প্রমাণ বিলোপের চেষ্টা

ঘটনার রাতে স্বপ্নদীপ পড়ে যাওয়া বা তাকে ফেলে দেওয়ার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পুলিশকে কোনরকম খবর না দিয়ে অভিযুক্ত ছাত্র এবং প্রাক্তনীরা যাবতীয় তথ্য প্রমাণ বিলোপ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালায় বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এমনকি কয়েকজন ছাত্র স্বপ্নদ্বীপকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মুহুর্তেই হোস্টেলে সৌরভ চৌধুরী এবং তার সমসাময়িক আরো জনা দুয়েক বহিরাগত প্রাক্তনীর নেতৃত্বে রীতিমতো জিবি অনুষ্ঠিত হয়। সেই জিবি বা হত্যা পরবর্তী স্ট্রাটেজি বৈঠকে প্রত্যেককে বুঝিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ এলে নিজেদের অ্যালিবাই হিসেবে কে কি বলবে এবং দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যেকের ফোন থেকে যাবতীয় ডিজিটাল এভিডেন্স ডিলিট করে দেওয়া হয়। তবে শুধুমাত্র প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমান আবাসিকরা নয় এই বৈঠকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক স্তরের একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন বলে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তর জানতে পেরেছে।