প্রয়াত মােয়াজ্জেম আলি
‘চাচার রেলগাড়ি’
স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে

0

Last Updated on January 3, 2021 11:42 PM by Khabar365Din

গৌতম লাহিড়ী


সৈয়দ মুজতবা আলির ‘দেশে-বিদেশের কথা কে না জানে? স্বাধীনতাপুর্বে কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত রেলগাড়িতে সফর করেছিলেন। বিনা বাধায়। বিনা ভিসায়। তাঁরই ভ্রাতুস্পুত্র সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। একটানা পাঁচ বছর সফল কূটনীতিবিদ হিসাবে যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার জন্য আজও তিনি রাজধানীতে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। স্বপ্ন ছিল ‘চাচা’ সিরাজের সেই রেল যাত্রার পথ উন্মুক্ত করা। অন্তত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখার’ দৃশ্য তাঁকে ব্যথিত করতো। আচমকা ছুটন্ত ক্যামেরা থেমে যেতো সীমান্তে এসে। দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে যেতে হলো ঢাকায়। ফিরে গেলেন ১৯ ডিসেম্বর। ৩০ ডিসেম্বর -২০১৯ । আচমকাই অসুস্থ হয়ে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করলেন। যাওয়ার আগে দিল্লিতে প্রেস ক্লাবে শেষ মিলনসভায় বলেছিলেন- আমি আবার আসবো ফিরে। দেখবেন তখন আমার চাচার স্বপ্নের রেলগাড়ি চালু হয়ে যাবে। তিনি এলেন না। তাঁর সেই স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। ভারত-বাংলাদেশ বা বলা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদশের মধ্যে ছটি পয়েন্ট রয়েছে। যা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঐ সুবর্ণরেখার দৃশ্যের মতো। পাঁচটি চালু হতে চলেছে। আগামী দু বছরের মধ্যে সবকটি চালু হয়ে যাবে।

২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের সরকার গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ। হাসিনা তাঁকে দিল্লিতে পাঠান। একদা বিদেশ সচিব ছিলেন। অবসর নিয়ে মার্কিন মুলুকে একরকমের অবসর জীবন যাপন করছিলেন। তাঁকে ডেকে আনলেন হাসিনা। কংগ্রেস দলের সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের একটি রাজনৈতিক দল ভারতের ক্ষমতায়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা। অত্যন্ত ধীর স্থির মস্তিষ্কের রসপ্রাণ কূটনীতিবিদ মোয়াজ্জেম আলি বলতেন- যেন সাকাসের ট্রাপিজ খেলা দেখাচিছ। কাকা মুজতবা আলির মতোই সরস। নিয়ম করে মুজতবা আলির ফেসবুক নিজেই চালাতেন একরকম। এখনও চালু রয়েছে।

কূটনীতিবিদ হিসাবে তাঁর রেসিপি ছিল সুস্বাদু-বলতেন ‘কাচ্চি বিরিয়ানির মতো। পুরানো ঢাকার আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিরিয়ানি। জগজ্জজোড়া নাম। দিল্লির প্রেস ক্লাবে তিনি তিনবার আয়োজন করেছিলেন-বিরিয়ানি উৎসব। আদতে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির কাছে বাংলাদেশকে চেনানো। এমনকি অবসরের পরে ঢাকা রওয়ানা হওয়ার আগে তিনি বিরিয়ানি উৎসব আয়োজন করার জন্য ঢাকা সফর পিছিয়ে দিয়েছিলেন। বাঙ্গালি সংস্কৃতি তাঁর রকতে। হবেই না কেন? তিনিই প্রথম শেখ হাসিনা সরকারের হয়ে ইউনেস্কোতে বাংলাভাষাকে মাতৃভাষা দিবস রূপে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব এনেছিলেন জাতিসংঘে। তিনি দুতাবাসের দরজা খুলে দিয়েছিলেন ভারতীয়দের জন্য। পাবলিক ডিপ্লোমেসির এক অনন্য নজীর সৃষ্টি করেন। একসময়ে ভারতের উর্দু দৈনিকগুলিতে শেখ হাসিনা সরকারের বিরূদ্ধে প্রবল সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে জামায়েত-ইসলামিদের ফাঁসি দেওয়া নিয়ে। মোয়াজ্জেম সাহেব প্রথম ঢাকার কূটনীতিবিদ যিনি উর্দু সাংবাদিকদের সংগে পৃথকভাবে মিলিত হলেন। একদা পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে ছিলেন। চোস্ত উর্দু জানতেন। সহজেই প্রাঞ্জলভাবে বাংলাদেশের যুকতিগুলি। ব্যাখ্যা করলেন এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে এক নতুন চিত্র প্রকাশ করলেন। এরপর ভারতের উর্দু সংবাদমাধ্যমগুলি বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করলো তাই দেখে। তিনিও অভিভুত। পরে হাসতে হাসতে বলেছিলেন-আমি আপনাদের বোকা বানাইনি তো?

দিল্লিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা ছিল-বাংলাদেশি মানেই অনুপ্রবেশকারী। হাসতে হাসতে বসেছিলেন- বাংলাদেশের এখন কাউকে যদি বলেন আসামে যেতে তাহলে রেগে যাবে। এঁরা এখন ভুমধ্যসাগরে নীল সমুন্দরের পাণিতে সাঁতার দেওয়ার কথা ভাবে। দ্বিতীয়ধারণা-চিনের সংগে সখ্যতা বাড়ছে ঢাকার। মুজতবা আলির ঢং-এ বলেছিলেন- চিন হলো ব্যাংকের ম্যানেজার। ভারত আমাদের ভাই। ভাইয়ের থেকে ঋণ নেওয়া আর ব্যাংক ম্যানেজারের থেকে ঋণ নেওয়া কি এক হলো? বাংলাদেশকে এভাবে আর কেউ চেনাতে পারবেন কিনা জানিনা। তাই তাঁর মৃতুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here