Last Updated on December 7, 2022 7:20 PM by Khabar365Din
গৌতম লাহিড়ী ● বাংলাদেশ থেকে ফিরে
খবর ৩৬৫ দিন। রাঙাবালি। চরমন্তাজ আরো কত অজানা চর। সূর্য সোনা রঙ ছড়ায়। তাই সোনার চর বঙ্গোপসাগরর কুল হারানো দিগন্তের শেষ ভূখন্ডে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে দক্ষিণ প্রান্তে। পদ্মা-মেঘনা-গঙ্গা- ব্রত্তপুত্রর আলিঙ্গন । এক একটা চরের সৌন্দয্য বৈচিত্র্যর বিভিন্নতা। জনপদ -জঙ্গল- প্রাণীর বৈচিত্র্য। চরমন্তাজে শহিদুল-লিপি বেগমদের মতো শদুয়েক পরিবার। এঁরা মত্তা সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবি। এঁদের জন্ম থেকে মৃত্যু। বিবাহ-সন্তান প্রসব সবই নৌকার মধ্যে। চরের স্থলজমিতে বাসস্থান নেই। এসব চরের অনেকগুলোতেই রাঙাবালি থেকে কৃষ্ণকায় বালুকা বেলার কুমারী সৈকত। কোথাও টে ঝাউবনে বাতাস বয় ঝিঁঝির সুরে। ম্যানগ্রোভের ; জঙ্গল। সৈকতে লাল কাঁকড়ার মিছিল। এখানে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত অবলোকন করার বিরল অভিজ্ঞতা। সমুদ্র গর্ভ থেকে উদয় হয় সূর্য। অস্ত যায় গর্ভে। তাই তো এদের বলা হয় সমুদ্র তনয়া। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য্যের সম্ভার গুপ্তধনের মতোই আবিষ্কার আচমকা ভীড়, করবে বুনো মোষ, চিত্রা হরিণ। ভালুকও। মাছরাঙ্গা পেলিক্যানদের সংসার এখানেই। বনমোরগ-বনবিড়ালের সহাবস্থান। বুনো শিয়াল বুনো ময়ূরের পেখ ম এক অভিনব পটভূমি তৈরি করে। সমুদ্রের মধ্যে একফালি নিসর্গ। বকের সারি।
মাছধরাদের চরগুলির মধ্যে একমাত্র চর কুকরি-মুকরিতেই রয়েছে অভয়ারণ্য। সুন্দরী-কেওড়ার সুবাসের মধ্যে পথ হারানো ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। বিশাল সুন্দরবনের অপরপ্রাপ্ত। যা এখনও লোকচক্ষুর অন্তরালে। হুমাইল লম্বা, ছমাইল চওড়ার চর আচমকা শেষ হয়েছে মেঘনার মোহনায়। নিকটবর্তী নগরী বরিশাল। ১৩০ কিমি দুরে। যাতায়াত কেবলমাত্র নৌকায় মাছ ধরার ট্রলারে। অথবা স্পীড বোটে। বুনো কুকুর- মেকু জাতের ইঁদুরের বাস বলে নাম কুকুর মুকরি। বাঁশ-বেত নারকোল গাছের সারি বাংলার প্রতীক হয়ে রয়েছে এই প্রত্যন্ত প্রান্তে। জঙ্গলের মাধ্যে খাঁড়ি। সুন্দরবনের প্রতিলিপি।
চরগুলিতে যোগাযোগের মাধ্যম নেই। বড় জেলা বলতে পটুয়াখালি । তার অধীনে রাঙ্গামাটির রাঙাবালি চর। চরটাই উপজেলা। ছালিতবুনিয়া ও আগুণমুখী নদী বৃত্তাকারে ঘিরে রেখেছে চরকে। বর্মার রাখাইন প্রদেশ থেকে একসময়ে রাখাইন জনগোষ্ঠী চলে এসেছিল এখানে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ধীবর জাতির লোকেরা আশ্রয় নেয় এই চরে। রাখাইনরা চাষাবাদ করলেও মুলত রাখাইন নামে এক জনপ্রিয় সুরার উৎপাদক। ডাবের জলের সংগে মেশানো সুরা স্বাদেও উপাদেয় । বাংলাদেশে মদ নিষিদ্ধ হলেও এখানে রাখাইন মদিরার স্বাদ লোকপ্রিয়। স্বাস্থ্যকর পানীয় বটেও। এখন জনপদ জমজমাট। পটুয়াখালি থেকে নদীপথে ত্রিশ কিমি । ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তরমুজের ক্ষেত। নদীতে মাছ ধরা প্রধান উপজীব্য। নদী ও সমুদ্র মোহনীয় পাওয়া যাবে ইলিশের জাল। এখানকার সুস্বাদু ইলিশ অন্য কোথাও মিলবে না।
রাঙাবালি থেকে স্পীডবোটে চর হেয়ার। কেন এমন নাম কেউ জানেননা। হেয়ার সাহেব এখানে এসেছিলেন বোধহয়। কালো বালুকা বেলার সৈকতে ঝাউবন। নির্জন। জনবিহীণ। নিরিবিলি বিশ্রামের সুবর্ণ সুযোগ। শিরশির শীতল বাতাসের সংগে মিঠেকড়া সুর্যর আলোর এক অনাবিল আনন্দ। সমুদ্রের উপরিভাগের চর ব্যাতিত এখানে রয়েছে হিমালয় থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা বালু কণার ডুবন্ত চর। সতর্কতা তাই। জোয়ারের সময়ে যে বিশাল জলরাশি মন পুলকিত করবে, ভাঁটার সময়ে সেই সব ডুবন্ত চর মাথা তুলে উঠে স্পীড বোটের গতি রুদ্ধ করে দেবে। একবার সময়ের হিসাবের গোলমাল হলে চরেই আটকে যেতে হয়। জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করা ভিন্ন পথ নেই। শুশুকের বাহিনীর আক্রমণের আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
রাঙাবালির চরমন্তাজে নদীর জলের গভীরতা রয়েছে বলে এই প্রথম চালু হলো রাত ভর যাত্রার লঞ্চ সার্ভিস। ঢাকা সদরঘাট থেকে রাঙাবালি বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেস্বরী-শীতলক্ষ্যা – মেঘনা হয়ে পদ্মা। তারপর বহু উপনদী পেরিয়ে রাঙাবালি। কুয়াকাটা লঞ্চের বিলাসিতা উপভোগ করাও এক অভিজ্ঞতা। মিলবে লালকাঁকড়া ভাজা- ইলিশ- খাসি-রাজহাস। অসংখ্য নদীর মাছ। নাম না জানা। স্বাদে অতুলনীয়। একবার পৌঁছালে পশ্চিমবঙ্গোপসাগরে গজিয়ে ওঠা চরসমূহ। নিঝুম দ্বীপ-পাখির চর,বুড়ির চর আরো কত কি। ভারতের সংগে সমুদ্র সীমানা মীমাংসা হওয়ার পর এখানে এখন বসতি স্থাপনের মহাযজ্ঞা শুরু হয়েছে। সমুদ্র ও নদীর নীচ দিয়ে কেবল মাধ্যমে বিদ্যুতের লাইন পৌঁছেছে জনবসতি এলাকায়। বাড়ি তৈরি করছেন শেখ হাসিনা সরকার। স্কুল-হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেট সেবাও রয়েছে। সমুদ্রের নোন জল রুখতে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা কক্সবাজারের বাইরে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠছে সমুদ্রের মধ্যে।