শ্লথ ব্যাটারি বোট ব্যর্থ, ডিজেল বোটই বিকল্প

0

৩৬৫ দিন। তথাকথিত পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত অ্যান্ড কোং এর দাবি হাস্যকর বলে প্রমাণিত হল। রোয়িং করার সময়ে ব্যাটারি চালিত রেসকিউ বোটকে স্বীকৃতি দিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল)ও যে আদতে চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক কাজ করেছে তা রবীন্দ্র সরোবরের লেকের জলে ব্যাটারি চালিত রেসকিউ বোটের ট্রায়াল রানে প্রমাণিত হয়ে গেল।

ব্যাকগ্রাউন্ড

সুভাষ দত্ত অ্যান্ড কোং -দের অবাস্তব দাবিকে চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক প্রথায় স্বীকৃতি দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত (প্রশ্ন উঠেছে কেন?)। ফলত, সরবরের লেকে বন্ধ হয়ে যায় ডিজেল চালিত অত্যাধুনিক লাইভ সেভিং ইকুইপমেন্ট সহ রেসকিউ বোট। তারপরেই রোয়িং করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে দুর্ঘটনায় দুজন ছাত্রের মৃত্যু হয়। রবীন্দ্র সরোবরের সমস্ত রোয়িং ক্লাব গুলি এক বাক্যে স্বীকার করে নেয়, যদি সেদিন ঘটনাস্থলে ডিজেল চালিত হাই স্পিড এর অত্যাধুনিক রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে হয়ত ওই দুই ছাত্রের প্রাণ বাঁচানো যেত। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি কারণ ব্যাটারি চালিত বোট দিয়ে উদ্ধারকার্যে নেমে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। এরপর কলকাতা পুলিশের তরফে রোয়িং করার ক্ষেত্রে ক্লাবগুলিকে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
রবিবার ব্যাটারিচালিত বোট দিয়ে ট্রায়াল রান

ব্যাটারি চালিত বোট দিয়ে রোয়িং করার সময়ে আদৌ রেসকিউ করা কতটা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতেই রবিবার সকালে ট্রায়াল রানের উদ্যোগ নেয় ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাব। রবিবার ভোর ভোর সিআরসিতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ক্লাব সংলগ্ন জলে একটি বোট রাখা রয়েছে, যাতে বড় বড় করে লেখা, ইলেকট্রিক বোট বাই ক্যালকাটা স্পোর্টস বোটস। মিনিট পনেরো বাদে, ৫ জন বিশেষজ্ঞ সেই বোটে উঠে পড়লেন। আরো একজন একটি ব্যাটারি বোটের ওপর নিয়ে এলেন এবং বোটের ওপর ব্যাটারিটিকে বসানো হল। রেসকিউ বোটের মধ্যে একজন স্টিয়ারিং অপারেট করছিলেন, দুজন ব্যাটারি অপারেট করছিলেন এবং বাকি তিনজন বোটে কোনক্রমে বসে ছিলেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ব্যাটারিটি যে বিপুল পরিমাণ জায়গা বোটে দখল করেছে, তার ফলে রেসকিউয়ারদের বোটে বসতে খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল। তারপর বোটটি চলতে শুরু করল, নিতান্তই ঢিমেতালে। একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট পর্যন্ত যাওয়ার পর বোটটি এবার পারে ফিরে এল‌। দুবার ট্রায়াল হল। দুবারই খুবই অল্প স্পিডে জলে চলেছে বোটটি।
ব্যাটারি চালিত রেসকিউ বোট, ডিজেল চালিত বোটের তুলনায় অনেক কম স্পিডে চলে

সকাল থেকেই সিআরসির সাধারণ সম্পাদক চন্দন রায় চৌধুরী পুরো বিষয়টা তদারকি করছিলেন। তিনি বললেন, পেট্রোল বা ডিজেল চালিত বোটের স্পিড এই ব্যাটারি চালিত বোটের স্পিডের থেকে অনেক বেশি। তারওপর ব্যাটারি চার্জ দিতে হয় ৮ ঘন্টা, তাতে ঘন্টা দেড়েক চলে ব্যাটারি চালিত রেসকিউ বোট। আর ব্যাটারির যা সাইজ দেখলাম, পুরো বোর্ডের অর্ধেকের বেশিটাই কাভার করে ফেলেছে। হয়তো এর থেকে উন্নত ব্যাটারি পাওয়া যায়, তার সাইজ হয়তো ছোট, কিন্তু তার দাম আমার জানা নেই। এরপরেও আমরা এক্ষুনি কোনো ফাইনাল সিদ্ধান্তে আসছি না। একবার রোয়িং করার সময়ে এই ব্যাটারি চালিত রেসকিউ বোট কতটা সহযোগিতা করে তা একবার দেখে নিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এদিন রেসকিউ বোটে থাকা ৬ জনের এক সদস্য বললেন, আরে এভাবে হয় না। কোনদিনই ব্যাটারি চালিত বোট দিয়ে রেসকিউ এর কাজ করা যায় না। দেশ-বিদেশের যেকোনো রোয়িং প্রতিযোগিতা দেখুন, দেখবেন ডিজেল বা পেট্রোল জাতীয় বোট ব্যবহার করে রেসকিউ অপারেশন চলছে। স্পোর্টস বাদ দিন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী বা আর্মিও ব্যাটারি চালিত বোট দিয়ে রেসকিউ করার কথা চিন্তাও করতে পারে না।
রবীন্দ্র সরোবরের রোয়িং ক্লাবগুলি ট্রায়াল রান করাচ্ছে

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহতেই লেক ক্লাব ব্যাটারি চালিত বোট নিয়ে এই ধরনের ট্রায়াল রান করিয়েছে। তারাও যে বিষয়টাতে অখুশি তা তারা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছে। জানা গিয়েছে, এক এক করে রবীন্দ্র সরোবরের সমস্ত রোয়িং এবং অন্যান্য ক্লাব গুলি এই ধরনের ট্রাইল রান করবে। তবে প্রত্যেকেরই মত, চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। এখন প্রশ্ন উঠছে কেন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুরাল? তথাকথিত পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত অ্যান্ড কোং দের খুশি করতে পেরে তাদের স্বার্থ কী? স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে খুব শীঘ্রই রবীন্দ্র সরোবরের লেকে আবার রোয়িং শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে যদি আবার কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সেই দুর্ঘটনার দায় জাতীয় পরিবেশ আদালত নেবে কিনা সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here