Last Updated on September 20, 2021 10:04 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। গোটা কলকাতা ওয়াটার লগড, জল বন্দি হয়ে আছে নগর কলকাতা। ১৯৭৮ সালে জলবন্দি নগরের সেই ছবি দেখেছে কলকাতাবাসী। ২৪ ঘন্টায় ৩৬৯ মিলি মিটার বৃষ্টি সেবার বীভৎস বন্যার সৃষ্টি করেছিল। ভয়ানক বৃষ্টি ও তৎকালীন সরকারের অকর্মণ্যতায় একটানা ১০ থেকে ১২ দিন মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেনি। তারপরেই ১৯৯৯, সেবারও বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৯২.৪ মিলি মিটার। সেবারেও একই চিত্র, তুমুল বন্যা এবং বামফ্রন্ট সরকারের অকর্মণ্যতা। তারপর কেটে গেছে ২১ বছর। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এবং যার ফলে স্তব্ধ হয়ে গেছে কলকাতা। রাত বাড়লে এই পরিসংখ্যান ১৯৯৯ সালের পরিসংখ্যানকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তবে এই রেকর্ড বৃষ্টির পরেও যে প্রশাসনিক কর্মতৎপরতায় জল নামতে শুরু করেছে গোটা কলকাতা শহর থেকে তাকে কুর্নিশ না জানিয়ে কোনো উপায় নেই। যেখানে যেখানে জল জমার ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, সমান্তরালভাবে পাশের রাস্তা দিয়ে বাস গাড়ি বা অটো যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। রেকর্ড বৃষ্টিতে কলকাতা পুরসভা অতিরিক্ত পাম্প চালানোর পরেও এখনো পুরোপুরিভাবে ওয়াটার লগড রয়েছে কলকাতার কিছু রাস্তাঘাট।
যদিও প্রাণহানির খবর এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি তবুও ব্যাপক বৃষ্টিতে সোমবার অঘোষিত রেইনি ডে পালন করেছে কলকাতাবাসী। শুধুমাত্র বাড়িতেই নয়, এসএসকেএম হাসপাতাল, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন ভেতরেও এদিন বেলা পর্যন্ত জল জমে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেই জল বের করে দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পূর্বাভাস আগে থেকে থাকলেও, ভরা কোটালের জন্য লক গেট গুলি বন্ধ থাকায় জল বেরোনোর পথ বন্ধ ছিল। কিন্তু অবস্থা বুঝে কোথাও কোথাও লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে যাতে জমে থাকা জল বেরিয়ে যায়। কলকাতা পুরসভা অতিরিক্ত পাম্প চালিয়ে জমা জল বের করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এদিন বেসরকারি অফিস গুলিতে ছিল স্বঘোষিত রেনি ডে। দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ, কালীঘাট টালিগঞ্জ এলাকায় ১০০ মিলি মিটার বেশি বৃষ্টিপাত হয় গত ২৪ ঘন্টায়। অন্যদিকে চেতলা, যোধপুর পার্ক এলাকায় ১১০ মিলি মিটার এর উপর বৃষ্টি হয়। দুপুর দেড়টার সময় ব্যাপক বৃষ্টির মাঝেই বালিগঞ্জের কাছে রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে।

একইসঙ্গে সাউদার্ন এভিনিউতেও বৃষ্টির কারণে বেশকিছু গাছ ভেঙে পড়ে। কোনরকমে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায় একটি অলটো গাড়ি। তৎক্ষণাৎ পুরসভার উদ্যোগে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উত্তর কলকাতা ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি দক্ষিণ কলকাতার সাউদান এভিনিউ, বাম আমলে এক ঘন্টা বৃষ্টি হলেই যেখানে বুক পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে যেত, সেই সকল রাস্তায় জল দাঁড়ায় নি, কারণ উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার তুলনামূলক নিচু জায়গা গুলিতে স্থায়ী বুস্টার পাম্পিং মেশিন বসানো হয়েছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই। এখনো কলকাতার ও তার সংলগ্ণ এলাকায় কিছু জায়গা জুড়ে বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু কলকাতাবাসীকে যে আর কোনদিন ভোগান্তির বন্যা পোহাতে হবে না, তা বুঝে গেছে শহরের বাসিন্দারা। ১৬০ মিলি মিটার বৃষ্টি পরলে কি করে আর অফিস যাওয়া সম্ভব, তাতে গাড়ির ভিসিবিলিটি খুব কমে যায়, দুর্ঘটনা ঘটার ভয় থাকে। তবে এর আগে হওয়া বহু বৃষ্টিতেই স্বচ্ছন্দে মানুষ অফিসে গেছে এবং কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরেছে। এটাই নতুন কলকাতা, এটাই উন্নয়নের কলকাতা, এটাই মা মাটি ও মানুষের কলকাতা যা বর্তমান সরকার উপহার দিয়েছে নগরবাসীকে।
প্রশংসনীয় পুর প্রশাসক
কলকাতার যেসব জায়গা নিচু সেই সব জায়গায় ট্র্যাডিশনালি জল জমে। ৭০ দশকে এবং বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কলকাতা নরকতুল্য ছিল। পুর প্রশাসন ছিল শূন্য। এই ধরণের প্রচন্ড বৃষ্টি হলে সাধারণত ৩ দিন জল জমে থাকত, কোথাও কোথাও ১৫ দিনও। বন্যা ছিল কলকাতার নিত্যদিনের ঘটনা। ২০১১ তৃণমূল সরকারের আমলে অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। জল জমলেও জল নামানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায়। কোথাও কয়েক ঘণ্টার বেশি জল দাঁড়ায় না৷ মমতা’র উদ্যোগে ফিরহাদের আমলে কলকাতার পুর প্রশাসন পূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে।