Last Updated on August 20, 2023 6:24 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষের ছাত্র হত্যার ঘটনায় এবারে বড়সড়ো বিপদে পড়তে চলেছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের যাবতীয় নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে এবং ইউজিসি গাইডলাইন অমান্য করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়নি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয় অসংখ্য গাফিলতি রাখা হয়েছে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে, তার প্রেক্ষিতে এবারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যদি আগামী সাত দিনের মধ্যে অর্থাৎ চলতি সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলির পাশাপাশি হোস্টেলগুলিকে ক্যামেরার মোড়কের না মুড়ে ফেলতে পারেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে জাতীয় র্যাঙ্কিং তালিকায় অবনমন হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। অন্যদিকে প্রথম বর্ষের ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে নিয়মিত র্যাগিংয়ের যে ঘটনা প্রকাশ্যে এসে পড়েছে তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিএম পন্থী অধ্যাপক সংগঠন জুটার সদস্য অধ্যাপকদের নিয়ে তৈরি হওয়া অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি ভেঙে দেওয়ার পক্ষপাতী ইউজিসি। তবে প্রথম বর্ষের ছাত্র হত্যার ঘটনার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছিলেন তারা কেন মিথ্যে রিপোর্ট পেশ করেছে তার জন্য বিভাগীয় তদন্তের পথেই এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
তীব্র প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রীর
যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ইউজিসি-র নিয়ম মানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সিসি ক্যামেরা কেন বসানো হয়নি।
কেন ভাঙা হচ্ছে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বন্ধ করার জন্যই কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশে তৈরি হওয়া
রাঘবন কমিটির রিপোর্টে র্যাগিং রোধে বেশ কয়েকটি কর্তব্য পালনের কথা বলা হয়েছে সরকার তথা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে৷ যার মধ্যে অন্যতম, প্রোব্যাবল র্যাগারদের চিহ্নিত করা৷ র্যাগিং রোধে আলাদা করে বরাদ্দ নির্ণয় এবং র্যাগিংয়ের ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে আর তেমন কোনও ঘটনা ঘটতে না পারে৷ এ বিষয়ে স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা প্রশাসন, রাজ্য তথা কেন্দ্রকে এক যোগে কাজ করতে হবে৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে বারে বারে নবাগত ছাত্রছাত্রীদের উপরে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ উঠলেও এই কমিটির পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেই জানতে পেরেছে ইউজিসি।
কোন যুক্তিতে কাটা হবে যাদবপুরের র্যাঙ্কিং
গত কয়েক বছর ধরে বারে বারে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তারপরেও বিভিন্ন ইস্যুতে ইউজিসির পক্ষ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তার প্রায় কোনটি করা হয়নি এখনো। এমনকি হোক কলরবের সময় থেকেই বারেবারে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস এবং হোস্টেল গুলিকে সিসিটিভি ক্যামেরার মোড়কে মুড়ে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এবারে ছাত্র হত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী সাত দিনের মধ্যে যদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা না বসানো হয় তাহলে জাতীয় স্তরে তালিকায় অনেক নিচে নেমে যাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি আগামী ১০ বছরের মধ্যেও উৎকর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় আসার সম্ভাবনা থাকবে না যাদবপুরের। নিয়ম অনুযায়ী দেশের কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উত্কর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউট অফ এমিনেন্সের তকমা পেলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ১০০০ কোটি টাকার সাহায্য দেওয়া হয়। তবে সেই টাকার ৭৫ শতাংশ অর্থাত্ ৭৫০ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্র সরকার এবং বাকি ২৫ শতাংশ অর্থাত্ ২৫০ কোটি টাকা দেয় রাজ্য সরকার। চলতি বছরের এন আই আর এফ র্যাঙ্কিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সার্বিক ভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ত্রয়োদশে। এর সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দশম স্থান, ফার্মাসি বিভাগে অষ্টাদশ স্থান এবং গবেষণা ক্ষেত্রে ১৯তম স্থানে যাদবপুর। জানা গিয়েছে যদি কষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার তৌফিক এ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় একবার ছিটকে যায় তাহলে আগামী 10 বছরের মধ্যে আবার সেই দৌড়ে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব।