Last Updated on August 30, 2020 11:45 AM by Khabar365Din
দাম কিলো প্রতি ৩০ হাজার টাকা। না এটি সার্ক ফিন কিংবা এথেন্সের রেড বেরির দাম নয়, এটি ব্যাঙের ছাতার দাম। যদিও একে ব্যাঙের ছাতা বলে আর অবজ্ঞা করার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ বিশ্ব বাজারে এটিই এখন সর্বচ্চ মূল্যের সবজি। এর সাহেবি নাম মাশরুম। তবে যে সে মাশরুম নয়, দু বছর অন্তর একবার জন্ম নেয় হিমালয়ের কোলে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সবজি হল এই গুচ্চি মাশরুম। পাঁচ রকমের ভিটামিন, তেরো প্রজাতির মিনারেল আর প্রোটিনে ভরপুর এই মাশরুম হিমাচল, আর জম্মু কাশ্মীরের ফার জঙ্গলে মিনাস প্রজাতির শ্যাওলার বুকে জন্ম নেয়। যদিও অনেকের ভুল ধারণা আছে যে এই মাশরুম কেবল হিমালয়ের বুকেই টিকে আছে, তা আসলে ভুল তথ্য। পড়শী দেশ পাকিস্তান সহ গোটা লাতিন আমেরিকা ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনেও বিপুল পরিমাণে এই মাশরুম জন্মায়। তবে সেখানে এর নাম মোরচেল্লা। ইতালীয় এক উদ্ভিদবিজ্ঞানীর নামানুসারে এই নামকরণ। সুবিখ্যাত এবং বিরল এই মাশরুমের আসল কদর কিন্তু ফরাসিদের কাছে। এই মাশরুম বহুল ব্যবহৃত হয় ফরাসি রান্নায়। এখন অবশ্য বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ট্রাডিশনাল ইউরোপিয়ান কুইজিনে মোরচেল্লার ব্যবহার অবসম্ভাবি। তবে ক্রীড়াবিদদের কাছে এই মাশরুমের ভীষণ কদর। বিশ্বের সেরা ক্রীড়া প্রতিভারা যেমন রজার ফেডেরার, উসেইন বোল্ট, মাইকেল ফেলিপ্স কিংবা ক্রিস্টিয়ান রোনাল্ডোর রোজকার স্পোর্টস ডায়েটে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যটি থাকবেই। জিঙ্ক আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ , ফসফেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় প্রায় সব মিনারেলই মজুত এই মাশরুমে । এছাড়া থায়ামিন, রাইবোফ্লোমিন, ভিটামিন বি সিক্স, বি টুইলভ, ভিটামিন ডি সহ কার্বহাইড্রেড ও প্রোটিনে ভরপুর এই মাশরুম। বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আগে এক মাসের ক্যাম্প চলাকালীন জার্মান এবং ইংল্যান্ড দলের ফুটবলারদের যখন বিফ ও পর্ক খাওয়া বারণ ছিল ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে, তখন তাদের প্রতিদিনের ডায়েটে মোরচেল্লা সেই অভাব পূরণ করেছিল। জানালেন স্পোর্টস মেডিসিনের ডাক্তার অনির্বান পল। তিনি এও বললেন, এই সব ধরণের মিনারেল এবং প্রোটিনের জন্য ক্রীড়াবিদরা দিনে একাধিক মেডিসিন খেতেন, কিন্তু মোরচেল্লার গুরুত্ব বোঝার পর বিদেশের ক্রীড়াবিদরা এটাই খাচ্ছেন। আর এর সাইড এফেক্টও নেই, সেই সঙ্গে ওজন বাড়ার ভয়ও নেই। এদেশের বিখ্যাত ক্রীড়াবিদদের মধ্যে শচিন তেন্ডুলকর, ভি ভি এস লক্ষণ এবং বিশ্বনাথন আনন্দ প্রথম এই ডায়েট শুরু করেন। এখন অনেকেই তা অনুসরণ করছেন। বহু গুনে সম্পূর্ন হিমালয়ের গুচ্চি মাশরুম বৈজ্ঞানিক উপায়ে এখনো চাষ করা শুরু হয় নি। বললেন, বিধানচন্দ্র কৃষি বিদায়লয়ের গবেষক মৌসুমী গাঙ্গুলি। মৌসুমীর আক্ষেপ, এত লাভজনক এবং চাহিদার মাশরুম পাহাড়ের মানুষদের অর্থনৈতিক চেহারা আমূল বদলে দিতে পারে , অথচ সরকার নির্লিপ্ত। ফলে হিমচলের কিন্নর প্রদেশ থেকে মাত্র ৩০০ টাকা কেজি দরে এই মাশরুম কিনে ব্যবসায়ীরা বিশ্ব বাজারে ৭০ হাজার টাকা কিলো দরে বিক্রি করছে।