Last Updated on August 8, 2021 11:22 PM by Khabar365Din

আগরতলা থেকে রিপোর্ট ও ছবি অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৬৫ দিন। ত্রিপুরায় ভাজপাকে নিজের শক্তি দেখালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছাড়াই আজ সকালে ত্রিপুরা পৌঁছে সোজা চলে যান খোয়াই থানায়। সেখানে রাত থেকে গ্রেফতার করে আটকে রাখা হয়েছিল তৃণমূলের ছাত্র ও যুব নেতাদের পাশাপাশি মোট ১৪ জন তৃণমূল নেতা কর্মীকে। ভাজপা শাসিত ত্রিপুরা পুলিশ তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে মহামারী আইনে মামলা করার পাশাপাশি একাধিক জামিন অযোগ্য মামলায় এফআইআর করে গ্রেফতার করে রেখেছিল। আজ সকালেই ত্রিপুরায় পৌঁছানো ব্রাত্য বসু, কুনাল ঘোষ এবং দোলা সেনদের সঙ্গে নিয়ে দুপুর থেকেই খোয়াই থানায় প্রথমে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ আধিকারিক এবং পরে খোয়াই জেলার পুলিশ সুপারের কাছে বিনা শর্তে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন অভিষেক। সেই সঙ্গে তাদের ওপর থেকে জামিন অযোগ্য ধারা প্রত্যাহারের দাবি তোলেন। থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজীব সেনগুপ্ত, এসডিপিও রাজীব সূত্রধর ও ওসি মনোরঞ্জন দেববর্মাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ দেখান। আমি এখানে বসে থাকব৷ আপনি হয় এদের থানা থেকে জামিন দিন, নয়তো জানান, অভিযোগ কী। আপনি বিজেপির কথায় কাজ করছেন।
এরপরে নিজের চ্যালেঞ্জ ধরে রেখে ধৃত যুব তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর থেকে জামিন অযোগ্য ধারা বিচারক বাতিল করার পরেই থানা থেকে বেরোন অভিষেক। এদিন মূল মামলায় সকলের জামিন হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, তেলিয়ামুড়া থানায় দায়ের হওয়া মূল মামলায় জামিন হয়েছে এই চার যুবনেতার। তবে আমবাসা থানার কেস আদালত শুনতেই চায়নি। বরং এই অতিরিক্ত মামলা কার্যত উড়িয়ে দিলেন বিচারক। জামিনের শর্ত অনুযায়ী লোকাল বন্ড দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল যুব নেতাদের জামিন মঞ্জুর হওয়ার পরে অভিষেক নিজে আদালতে যান এবং পরে আজ রাত নটার বিশেষ বিমানে কলকাতায় নিয়ে আসছেন চিকিৎসার জন্য।
অভিষেকের হুঁশিয়ারি
উত্তর ভারতের নেতারা ত্রিপুরার মানুষকে পুতুলের মতো নাচাচ্ছেন। এখানে আর বিপ্লব দেবের আইন চলবে না। আপনারা লিখে রাখুন ১৭ মাস পরে বিপ্লব বাবুর সরকার বিদায় নিচ্ছে। ত্রিপুরা কি মঙ্গলগ্রহ নাকি? নাকি এটা বিজেপির পৈত্রিক সম্পত্তি? ভারতবর্ষের আইন তো এখানেও প্রযোজ্য। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা যখন পাথর ছুঁড়ছে, লাঠি-রড নিয়ে গাড়িতে হামলা করেছ, তখন পুলিশ চোখে পট্টি বেঁধে রয়েছে। আমাদের আহত কর্মীদের ন্যূনতম চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
বিজেপি-কে কী করে হারাতে হয়, তা তৃণমূল ভালমতোই জানে। ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। যাঁরা মার খাচ্ছেন, তাঁদেরই গ্রেফতার করছে ত্রিপুরার পুলিশ। একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, তৃণমূলকে ভয় দেখিয়ে, পাথর ছুঁড়ে দমানো যাবে না। আগামী নির্বাচনে ত্রিপুরা থেকে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করেই ছা়ড়বে তৃণমূল। বিজেপি তো ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলে। তার পরও ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এত খারাপ কী ভাবে হতে পারে? ত্রিপুরা কি বিজেপি-র বাবার সম্পত্তি? কর্মীরা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের ন্যূনতম মেডিক্যাল পরিষেবা দেওয়া হয়নি। এমনকি আইনজীবীদের গাড়িতেও হামলা চালানো হচ্ছে। আর ১৭-১৮ মাস। এ বার থেকে সপ্তাহে তিন দিন আসব এখানে। যত দিন না ত্রিপুরা থেকে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করছি, তত দিন আসতেই থাকব। দেখা যাক, কার জেদ বেশি। ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। যারা মারছে, তাদের প্রশাসন আড়াল করে রাখেছ। এটা কাদের জন্য করতে হচ্ছে, আমরা জানি। প্রশাসনকে দোষ দিই না। চাকরির স্বার্থে তাদের করতে হচ্ছে। আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারছেন। তাঁদের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। সুবল ভৌমিকের গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হাত থেকে মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। চারিদিকে নৈরাজ্য অনাচার। একবুক স্বপ্ন নিয়ে আশা নিয়ে মানুষ বিজেপিতে এসেছিল। বিজেপি যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে ত্রিপুরাকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। ভারতের আইন তো সবার জন্য প্রযোজ্য। সিপিআইএমের জন্য প্রযোজ্য, তৃণমূলের জন্য প্রযোজ্য, কংগ্রেসের জন্য প্রযোজ্য। আমাদের সহকর্মীদের রাস্তায় বেরোলে গ্রেফতার করছে। এই দ্বিচারিতা বেশিদন চলবে না।বিপ্লববাবুর শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপিকে কী করে হারাতে হয় তৃণমূল জানে। মানুষের ওপর খোলাখুলি হামলা হচ্ছে। রড দিয়ে মারা হচ্ছে। ত্রিপুরা এখানকার মানুষের। কারও বাপের জায়গা নয়। দেড় বছরে যত পরিশ্রম করার করবে। বিজেপি সরকারকে উপড়ে ফেলবে।