Last Updated on October 15, 2020 8:57 PM by Khabar365Din
বিশেষ প্রতিবেদন। মুম্বই | লুল্প গল্পে ত্রৈলােক্যনাথ বর্ণনা করেছিলেন, কিভাবে ঘানিতে পিষে ভুতের শরীর থেকে তেল বের করা যায়। অসাধু ব্যবসায়ীর মানুষের মধ্যে বিভ্রম তৈরির এই মারাত্মক স্যাটায়ার কতটা বাস্তব তা জানতে গেলে দিল্লির দিন দয়াল উপাধ্যায় মার্গের হেড আপিসে না গেলেও চলবে। ১৪ জুন থেকে সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা নিয়ে গত সাড়ে চার মাসের উল্লসিত তদন্ত ও কুৎসা প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখ লেই পরিষ্কার হয়। শকুনির ন্যায় সজাগ দৃষ্টিতে তারকার মৃতদেহকে বুলস আই করে আসন্ন বিহার ভােটের কথা মাথায় রেখে, সিবিআই, ইডি এবং নারকটিক্স দফতর নামক পােষা ওয়াচ ডগ এবং কঙ্গনা নামক এলকেশীর ধারাবাহিক মহান বচন, তৎসঙ্গে কিছু মিডিয়ার কুম্ভীরাশ্রু ও লাগাতার অতিসক্রিয়তায় ভুতের (পড়ুন সুশান্ত সেন্টিমেন্ট) দেহ হতে তেল নিষ্কাশন পদ্ধতি প্রায় কার্যকরী হয়েই পড়েছিল।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল কই! বিফলে গেল সব পরিকল্পনা। ভুতের তেল গায়ে মেখে গল্পের মত বলশালী হওয়া হল না। সিবিআই কার্যত স্বীকার করে নিল, তদন্তে কিছুই মেলেনি। সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার তদন্ত শেষে সিবিআই ষড়যন্ত্র কিছুই পেল না। তারা স্বীকার করে নিল যে, এটি একটি পরিষ্কার আত্মহত্যার ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আইনি পরিভাষায় এটি ওপেন এন্ড ক্লোজ কেস। এই মর্মেই তদন্ত শেষ করে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রিপাের্ট দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। পাটনার সিবিআই কোর্টে এই রিপাের্ট জমা পড়তে চলেছে। রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এইমসের ভিসেরা ও পােস্টমর্টেম রিপাের্টে প্রমান হয়নি কোনও মাদক বা বিষ প্রয়ােগের ত্ব। একই সঙ্গে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটও হাদিস পায়নি কোনও বেআইনি লেনদেন। কেবল নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরাে ৩১গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা ছাড়া খুনের, ষড়যন্ত্রের কিংবা আত্মহত্যার প্ররােচনার মত কোনও তুই প্রমাণিত হয়নি। তাই তদন্ত শেষ করা হচ্ছে। সিবিআই এর এই তদন্ত রিপোের্ট কার্যত মুম্বাই পুলিশের জয়, সেই সঙ্গে সুশান্তের আত্মহত্যা নিয়ে বিহার ব্র্যান্ডিং রাজনীতির আত্মসমর্পণ বলা চলে। ১৪ জুন তারকার মৃতুর পর থেকেই বিহার সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে যে বৃহর নাটকের সূচনা করেছিলেন মােদি অমিত শাহরা, সেই চিত্রনাট্যের প্রধান তিন চরিত্র ছিল তিন যুঁটি। প্রথমজন, সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, যার কাজ ছিল রাজনৈতিক ভাবে এই ঘটনাকে প্রভাবিত করা। দ্বিতীয়জন, কঙ্গনা রানাওয়াত। যাঁর কাজ ছিল মুম্বই ইন্ডাস্ট্রির ভিতর থেকে লাগাতার কুৎসা করে প্ররােচনা দিয়ে যাওয়া। আর তৃতীয় ব্যক্তি হল ফেক নিউজ ও কিছু মিডিয়া। যারা লাগাতার সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে যাবে। একই সঙ্গে কাজ না করলেও এই তিন চরিত্রের উদ্দেশ্য একটাই, মহারাষ্ট্র সরকারের বদনাম এবং বিহার ভােটে বিজেপিকে সাহায্য করা। ননাংরা এই খেলার আসল চাল চালছিলেন কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় থিংক ট্যাংক। কায়দা করে মুম্বই চলচ্চিত্র জগৎকে আড়াআড়ি ভাগ করে প্রায় ফেলেওছিলেন। টিম কঙ্গনা এবং বাকিরা, এই ভাগ যখন স্পষ্ট হচ্ছে, কঙ্গনাকে যখন সাধারণ মানুষ মুম্বইয়ের মসিহা ভাবছেন, ঠিক সেই সময় পার্লামেন্টে তীব্র প্রতিবাদ করে চলচ্চিত্র জগৎকে কালিমালিপ্ত করার বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়েছিলেন জয়া বচ্চন। বিরােধী হয়েও পাশে দাঁড়িয়েছেন হেমা মালিনিও। তারপর গত পাঁচ দিনে গােটা মুম্বাই চলচ্চিত্র জগত একজোট হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রুখে দাঁড়ায়। অবশ্যই এটা কেন্দ্রের বিজেপি থিংক ট্যাংকদের কাছে বড় ধাক্কা। সুশান্ত সিং রাজপুত নিয়ে আর জলঘােলা করা যাবে তারা টের পেয়ে গেছে।