
Last Updated on July 17, 2023 11:46 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। বেঙ্গালুরু। পাটনার পরে বেঙ্গালুরু। গত মাসে পাটনাতে ভাজপা বিরোধী ১৭ রাজনৈতিক দলের বৈঠকের পরে আগামীকাল কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে বসতে চলেছে ভাজপা বিরোধী ২৬ রাজনৈতিক দলের মহা বৈঠক। তার আগে আজ আগামীকালের বৈঠকের রূপরেখা তৈরীর জন্য প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর আমন্ত্রণে বৈঠকে বসলেন দেশের ভাজপাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা কলকাতায় ভাজপা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির যে কনক্লেভ আয়োজন করেছিলেন সেই বৈঠকের নাম দিয়েছিলেন ইউনাইটেড ইন্ডিয়া। মমতার পরামর্শ মেনেই বেঙ্গালুরু বৈঠকের থিম ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড।
এপিসেন্টার মমতা
তবে অংকের হিসেবে এবং গুরুত্বের নিরিখে এবারের বৈঠকেও এপিসেন্টার মমতাই। বাংলায় অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেস মমতার বিরোধিতা করার জন্য ভাজপা এবং সিপিএমের সঙ্গে আঁতাত করলেও তার প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যই যেন আগাগোড়া মমতাকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন সোনিয়া গান্ধী। এমনকি আজ আগামীকালের মহা বৈঠকের রূপরেখা তৈরীর জন্য স্ট্র্যাটেজি বৈঠকেও নিজে মমতাকে ডেকে নিলেন পাশের চেয়ারে বসার জন্য। গত মাসে পাটনার বৈঠকেই স্থির হয়েছিল ভাজপা বিরোধী মহাজোটের দ্বিতীয় বৈঠক আহ্বান করবে কংগ্রেস। সেইমত আজকের বৈঠকের মধ্যমণি হওয়ার কথা ছিল সোনিয়া, রাহুল এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের। কিন্তু সোনিয়ার নির্দেশে স্ট্র্যাটেজি বৈঠকে মমতাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আসন পুনর্বিন্যাস করে
নিজের একদিকে বসার ব্যবস্থা করেন মমতা এবং তারপরেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের, সোনিয়ার অন্যদিকে বসেন একে একে মল্লিকার্জুন খাড়্গে, রাহুল গান্ধী, লালু প্রসাদ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং উদ্ধব ঠাকরে।
মমতাকে বিশেষ আমন্ত্রণ সোনিয়ার
কয়েকদিন আগেই পরপর পাঁচটি সার্জারির জন্য শারীরিক অসুস্থতা এখনো সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেননি মমতা। সেইজন্যে আজ নৈশ ভোজের এবং তার আগের স্ট্রাটেজি বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানালেও তাকে ফোন করে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানান সোনিয়া। সোনিয়ার আমন্ত্রণ ফেলতে না পেরে বৈঠকে উপস্থিত হন মমতা। মমতাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান সনিয়া গান্ধি। এদিন মমতাকে ভিতরে নিয়ে যান কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও সঙ্গে ছিলেন ডি কে শিবকুমার। ২০২১ সালের জুলাই মাসে দিল্লিতে ১০ জনপথে, মমতা সোনিয়া বৈঠকের পরে আজ আবার মুখোমুখি হলেন মমতা ও সোনিয়া।
এর আগেও অবশ্য আজ বিকেলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মমতা বেঙ্গালুরু এয়ারপোর্টে নামার পরেই তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে আসেন কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ডিকে শিবকুমার।
নজিরবিহীন ২৬ দলের মহাজোট
ভারতীয় রাজনীতিতে এর আগে কখনো বিরোধী ঐক্য তৈরির জন্য ২৬ রাজনৈতিক দলের এক ছাতার নিচে আসার নজির তৈরি হয়নি। আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভাজপা কে হারানোর জন্য আজ এবং আগামীকাল বেঙ্গালুরু বৈঠকে যোগ দিতে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে ২৬ ভাজপা বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সব মিলিয়ে যে ২৬ দল এতে অংশ নিচ্ছে, সেই তালিকায় যে নামগুলি রয়েছে সেগুলি হল, কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, জনতা দল (ইউনাইটেড), আরজেডি, এনসিপি, শিবসেনা( ইউবিটি), সিপিআইএম, সিপিআই, সমাজবাদী পার্টি, ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, সিপিআইএমএল, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা, আম আদমি পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোকদল, এমডিএমকে, ভিসিকে, আরএসপি, কেডিএমকে, ফরওয়ার্ড ব্লক, আইইউএমএল, কেরালা কংগ্রেস(জে), কেরালা কংগ্রেস (মণি), আপনা দল (কামেরাওয়াড়ি) ও এএমকে।
খেলা ঘুরিয়ে দেবে বেঙ্গালুরু বৈঠক
বাংলা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা যে খেলা হবে স্লোগান তুলেছিলেন কার্যত সেই স্লোগান ধার করেই বেঙ্গালুরু বৈঠক প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরুর মিটিংয়েই বিরোধী দলের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা ভারতীয় রাজনীতিতে এবার খেলা ঘুরিয়ে দেবে। ২৬ দল রয়েছে। একাধিক ইস্যুতে একমত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে কংগ্রেস একলা কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। আমরা গণতন্ত্র রক্ষায়, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায়, আমাদের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজেন্সি লাগিয়ে সরকার বিরোধীদের কণ্ঠস্বরকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া তারই নজির। তারা সিবিআই ইডি লাগিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে ভেঙে দিতে চাইছে।