Last Updated on July 29, 2021 8:20 PM by Khabar365Din
নয়াদিল্লি থেকে
রিপোর্ট সৌগত মন্ডল | ছবি অমিত বন্দোপাধ্যায়
৩৬৫ দিন। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এখনো বাকি রয়েছে প্রায় আড়াই বছর। তার আগেই আগামী বছর উত্তর প্রদেশ এবং ত্রিপুরাসহ দেশের ৫ রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। এবারে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভাজপাকে হারানোর পরে স্বাভাবিকভাবেই মমতার নেতৃত্ব এবং তার আমলে বাংলায় বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কাছে যে ভাজপাকে হার মানতে হয়েছে, তা বিনা বাক্যব্যয়ে স্বীকার করে নিয়েছে কংগ্রেস থেকে শুরু করে প্রতিটি আঞ্চলিক দল। সেই কারণেই বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে মোদি বিরোধিতায় সর্বজনগ্রাহ্য মুখ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক এই অনুকূল পরিবেশ আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কাজে লাগাতে এবারের দিল্লি সফর মমতার। মমতার নিজেও বারেবারে বলেছেন এবারে দিল্লি এসেই যে সর্বভারতীয় স্তরে সমস্ত ভাজপা বিরোধী দল এক ছাতার নিচে চলে এসে রাতারাতি জোট গঠন হয়ে যাবে এমনটা ভাবা অত্যন্ত বোকামি। গতকাল সুখেন্দু শেখর রায়ের বাড়িতে আয়োজিত চা-চক্রে ব্যক্তিগত আলোচনায় মমতা বলছিলেন, জোট গঠন করা এত সহজ নয়। যে সন্তান এখনো ভূমিষ্ঠ হয়নি তার নাম যেমন ঠিক করা সম্ভব নয় ঠিক তেমনভাবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদি বিরোধী জোটে কোন কোন দল অংশ নেবে অথবা সেই জোটের প্রধান মুখ হিসেবে কে উঠে আসবে সেই নিয়ে জল্পনা কল্পনা করা অবাস্তব। এখনো প্রায় আড়াই বছর সময় বাকি রয়েছে লোকসভা নির্বাচনের আগে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নরেন্দ্র মোদী এবং ভাজপাকে সরানোর জন্য যদি সমস্ত বিরোধী দল সিরিয়াস চিন্তাভাবনা করে তাহলে ভোটের আগে তিন মাস সময় যথেষ্ট।
কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে সেতুবন্ধন
একদিকে যেমন ১০ জনপথের বাসিন্দা সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার সম্পর্ক বরাবর অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ এবং পারিবারিক। একের পর এক রাজ্যে বিভিন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পরে কংগ্রেস যেমন সর্বভারতীয় স্তরে মমতা তথা তৃণমূলের হাত ধরে শক্তি সঞ্চয় করতে চাইছে, ঠিক তেমনভাবে দিল্লি এবং পাঞ্জাবে কংগ্রেসের প্রধান শত্রু অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সঙ্গেও মমতার সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। আবার দক্ষিণ ভারতে যেখানে ভাজপা গত কয়েকটি নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে, সেই দক্ষিণাত্যের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন থেকে শুরু করে অন্ধ্রপ্রদেশে জগনমোহন রেড্ডি এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গেও মমতার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। আজ বিকেলেই মমতার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন করুণানিধির কন্যা সাংসদ কানিমোজি। লোকসভা নির্বাচনে ভাজপা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যে দল যেখানে শক্তিশালী তাদের পক্ষ থেকে একজন সাধারন প্রার্থী বাজট প্রার্থী দাঁড় করানোর যে ফর্মুলা মমতা বারে বারে বলেছেন, আঞ্চলিক পারস্পরিক শত্রুতা ভুলে সেই দলগুলোকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে আসন সমঝোতা করার জন্য এই মুহূর্তে সর্বভারতীয় স্তরে মমতার বিকল্প আর কোনো নেতা বা নেত্রী নেই। মহারাষ্ট্র যেমন শিবসেনা সুপ্রিমো তথা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে পাশাপাশি এনসিপি সুপ্রিম পাওয়ারের কাছে অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে বিবেচিত হন মমতা। একইভাবে বিহারে লালুপ্রসাদ যাদব ও তেজস্বী যাদবের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক মমতার। সুসম্পর্ক রয়েছে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গেও। আবার ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন মমতাকে। তাই দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ – সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে মমতার থেকে গ্ৰহনযোগ্য মধ্যস্থতাকারী কিন্তু নেই। তাই এই গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে নিপুন শিল্পীর মতো মমতা চাইছেন ভাজপার পদ্ম ফুলের পাল্টা এক বিভিন্ন রঙের ফুল দিয়ে গাঁথা মালা সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে। যে মালায় কোন ফুল কংগ্রেস, কোন ফুল স্ট্যালিন, চন্দ্রবাবু নাইডু, নবীন পট্টনায়েক, লালু প্রসাদ যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সরেন।
রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি সিভিল সোসাইটি
তবে ভাজপাকে সর্বভারতীয় স্তরে হারাতে গেলে যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক জোট যথেষ্ট নয় তা বাংলার নির্বাচন দিয়ে প্রমান করে দিয়েছেন মমতা। সেই কারণে দেশের বুদ্ধিজীবী ও সিভিল সোসাইটি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদেরও একইভাবে ভাজপা বিরোধী সচেতনতা প্রচারে শামিল করতে চান তিনি। ইতিমধ্যেই মমতার সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছেন জাভেদ আখতার এবং শাবানা আজমি। অন্যদিকে ভাজপা শাসিত উত্তরপ্রদেশ তথা নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনক্ষেত্র বারানসী থেকে বিশিষ্ট সাংবাদিক নারায়ন ইতিমধ্যেই মমতার পাশে দাঁড়িয়ে ভাজপা বিরোধিতার সুর চড়িয়েছেন।