Last Updated on August 14, 2021 8:52 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। এবার থেকে নাকি প্রতিবছর ১৪ অগাস্ট আতঙ্কের দেশভাগ স্মরণ দিবস হিসেবে পালিত হবে গোটা দেশে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের রক্তাক্ত স্মৃতিকে প্রতিবছর দেশের মানুষের কাছে নতুন ভাবে তুলে ধরে হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন এবং ৭৫ বছর আগের দাঙ্গার স্মৃতিকে তুলে ধরার জন্য অভিনব এই ঘোষণা করলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ প্রধানমন্ত্রী টুইট করেন, দেশভাগের যন্ত্রণা ভোলার নয়। আমাদের লক্ষ লক্ষ ভাই-বোন অর্থহীন বিদ্বেষ ও হিংসার জেরে আশ্রয়চ্যূত হয়েছেন, কেউ আবার প্রাণ হারিয়েছেন। ওই সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে ১৪ অগাস্ট আতঙ্কের দেশভাগ স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এর পরেই তিনি লেখেন, আতঙ্কের দেশভাগ স্মরণ দিবস সামাজিক বিভাজন, অনৈক্যের বিষ দূর করার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেবে এবং একাত্মতা, সামাজিক ঐক্য ও মানুষের ক্ষমতায়ণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করবে।
দেশভাগের তিক্ত স্মৃতি
১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট। ওইদিন শুধুমাত্র হিন্দু এবং মুসলমান ধর্মের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছিল দেশভাগ। ১৪ অগাস্ট পাকিস্তান ও ১৫ অগাস্ট ভারতকে পৃথক দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভারত স্বাধীনতা পেলেও দেশকে ভেঙে টুকরো করা হয়েছিল। অবিভক্ত ভারতবর্ষের বদলে তৈরি হয় ভারত ও পাকিস্তান। ধর্মের মাপকাঠিতে এই দেশভাগের জেরে ঘরছাড়া হয়েছিলেন বহু মানুষ। শুরু হয় ধর্মীয় ভেদাভেদ, গণলুন্ঠন সহ একাধিক ভয়াবহ ঘটনা। দেশভাগের ফলে তখন পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের অংশ করা হয়েছিল। পরে ১৯৭১-এ পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভারতের মধ্যে দেশভাগের ফলে সবথেকে বেশি যন্ত্রণা সইতে হয়েছিল বাংলা এবং পাঞ্জাবের মানুষকে। বাংলা ভেঙে যেমন প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়েছে ঠিক তেমন ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশেই রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশ।
বাড়বে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভাজন
এতগুলো বছর পেরিয়ে পূর্ববঙ্গ বা তারপরে পূর্ব পাকিস্তানের নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে এসেছিল যেসব হিন্দু এবং মুসলমান পরিবার, তারা এখন পুরোপুরি ভারতীয়ই হয়ে গেছেন। ৭৪ বছর আগে দেশভাগের যন্ত্রণা সহ্য করে যারা এদেশে বসবাস করতে এসেছিলেন অথবা স্বজন হারিয়ে ছিলেন সেই প্রজন্মের অধিকাংশই আজ প্রয়াত। বর্তমান প্রজন্মের যারা স্বাধীন ভারতের মাটিতে জন্ম নিয়েছেন তাদের প্রায় কারো কাছেই আজ দেশভাগের যন্ত্রণা নতুন করে কোন অর্থ বহন করে আনে না।
কিন্তু হঠাৎ করে স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছরে এসে সেই তিক্ত ঘটনার স্মৃতি রোমন্থন করলে উভয় ধর্মের মানুষের মধ্যে প্রায় পৌনে এক শতাব্দী পুরনো সেই ধর্মীয় বিভাজন, হানাহানি, ধর্ষণ, খুনোখুনি এবং সামাজিক বিভেদের স্মৃতি ফিরে আসবে। নষ্ট হবে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতার পরিবেশ। যে ভাজপা বরাবর উদ্বাস্তু এবং বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত রাজনৈতিক প্রচার করে চলেছে, হঠাৎ করে সেই উদ্বাস্তুদের জন্য ভাজপা তথা নরেন্দ্র মোদির অন্তর কেঁপে ওঠার পেছনে কিন্তু গভীর কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে বলেই আশঙ্কায় ভুক্তভোগীরা।
দেশ টুকরো টুকরো করতে সদা তৎপর ভাজপা
নরেন্দ্র মোদী আজ হঠাৎ করে ৭৪ বছর আগের দেশভাগের স্মৃতি ফিরিয়ে এনে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইলেও দেশ ভাগ করা অথবা বিভিন্ন রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো করার ক্ষেত্রে ভারতের ইতিহাসে সবথেকে বেশি কৃতিত্বের অধিকারী তাঁর দল ভাজপা। ভাজপা কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন রাজ্য ভেঙে তৈরি হয়েছে উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খন্ডের মতো রাজ্য। বাংলাতেও উত্তরবঙ্গে ভাজপা তুলনামূলক ভালো ফলাফল করার পরেই ভাজপা বিধায়ক এবং সাংসদেরা দাবি করছেন পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য, ভাজপা সাংসদ দাবি তুলেছেন পৃথক জঙ্গলমহল রাজ্যের। আবার বাংলা ভেঙে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের রাজ্য করার জন্য নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য উস্কানি দিয়ে চলেছে ভাজপা।
লক্ষ্য পঞ্জাবের নির্বাচন
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী বারেবারে দাবি করেছেন তিনি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন। স্বাধীন ভারতের নতুন চিন্তা ভাবনা নিয়ে নতুন ভারত গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। অথচ এখন হঠাৎ করে প্রায় পৌনে এক শতাব্দী পুরনো দেশভাগের যন্ত্রণা তুলে আনার পিছনে মূলত আগামী বছরের পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের ধর্ম এবং দেশভাগের তাস খেলার পরিকল্পনা করেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।