Last Updated on January 31, 2022 7:18 PM by Khabar365Din
৩৬৫ দিন। হিন্দুস্তান একটি হিন্দু রাষ্ট্র। আমরা মনে করি আমাদের দেশের ১৩০ কোটি মানুষই হিন্দু। কিছুদিন আগেই এমন বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত। ভাগবতের দাবি যে কোনও ধর্মীয় সংগঠনের বিচ্ছিন্ন মত নয়, তার প্রমাণ মিলল প্রাক্তন আরএসএস কর্মী তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের সিদ্ধান্তে।
পাঠ্যক্রমে হিন্দুত্ব
শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের অভিযোগ নতুন নয়। কিছুদিন আগেই গো-বিজ্ঞান পরীক্ষা নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিল ইউজিসি। এবারে সরাসরি উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশের বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় পাঠ্যক্রম চালু করল।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার পড়ানো হবে হিন্দু ধর্ম। কখনো শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মের চর্চা? তাও আবার স্নাতকোত্তরের বিষয়বস্তুর উপর। দেশের মধ্যে এই প্রথম বেনারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এই কোর্সের উদ্বোধন করেছে। এমনকি এই বিষয়ের উপর দেওয়া হবে আলাদা ডিগ্রিও। কিছুদিন আগেই এই ডিগ্রি কোর্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ভারত অধ্যয়ন কেন্দ্রে হিন্দু ধর্ম নিয়ে প্রতিদিন চর্চা করানো হবে। অধ্যাপক সদাশিব কুমার জানান, ২ বছরের এই স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য ইতিমধ্যেই ৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রী অবেদন জানিয়েছেন। এমনকি ভর্তি হয়েছে কিছু বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীও। এই কোর্সে মোট ১৬ পেপার রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হিন্দু ধর্মের আচার, রীতি-নীতি, মন্ত্রের মাহাত্ম্যের মতো বিষয় রয়েছে। চারটি সেমিস্টারে হবে পরীক্ষা।বিএইচইউ ডিরেক্টর ভি কে শুক্লা হিন্দু ধর্মের এই কোর্সের উদ্বোধন করে দাবি করেন, এটি একটি আন্তঃবিভাগীয় প্রোগ্রাম যা জাতীয় শিক্ষা নীতি যা ২০২০ সালের নতুন এডুকেশন পলিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এমনকি এই বিষয়বস্তুর মধ্যে অনেক অবাক করা তথ্য রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বিতর্ক কোথায়
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা নতুন কোন ঘটনা নয়। কিন্তু বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় কে হিন্দুত্বের পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে তার প্রস্তাবনায় লেখা রয়েছে ভারতে বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীরা নাকি হিন্দু ধর্মের একটি শাখা মাত্র। বিতর্ক দানা বেঁধেছে এই বিষয় নিয়ে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রচারক আরএসএস দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে ভারতের সমস্ত ধর্মাবলম্বীরাই নাকি হিন্দু! মুসলমানদের একটা অংশ পারস্য থেকে এসেছিল তাই তারা বহিরাগত আর ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সৌদি আরবের একটা বড় অংশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা উৎপত্তিগতভাবে আদতে হিন্দু। কারণ আর্যদের হাত ধরে যে হিন্দু সভ্যতার পতন হয়েছিল এরা তার অংশবিশেষ।
আরএসএস-এর হিন্দু দর্শন
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত কিছুদিন আগেই দাবি করেছিলেন, হিন্দুস্তান একটি হিন্দু রাষ্ট্র। হিন্দুত্বের গন্ধেই ভারতের স্বীয় ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। আমাদের সমাজ সংস্কৃতির ভাবনা এই ভাবধারাতেই নিযুক্ত। ভাগবত দাবি করেন, এদেশের পেশা থেকে ব্যক্তিগত জীবন, সমাজধারা সব কিছুতেই একই সংস্কৃতি প্রভাব বিস্তার করে রাখছে।
আমরা মনে করি আমাদের দেশের ১৩০ কোটি মানুষই হিন্দু। যখন কোনও আরএসএস কর্মী বলেন যে এই দেশ হিন্দুদের এবং তার ১৩০ কোটি মানুষ হিন্দু, এর অর্থ এই নয় যে আমরা কারও ধর্ম ও ভাষা, জাতি বদলাতে চাইছি – আমরা সংবিধানে ভরসা রাখি। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত মনে করেন, এ দেশের হিন্দু-মুসলমানদের পূর্বপুরুষ এক। প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকই হিন্দু। ইসলাম ধর্ম এসেছিল আক্রমণকারীদের সঙ্গে। এটাই ইতিহাস। বিষয়টিকে এ ভাবেই ব্যাখ্যা করা ভাল বলে মন্তব্য করেন তিনি। অতীতেও মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত দাবি করেছিলেন, ভারতের হিন্দু ও মুসলমানদের ডিএনএ একই।
মুসলিম অনুদানে তৈরি বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়
১৯১৬ সালে বেনারসে মদন মোহন মালব্য এবং অ্যানি বেসান্তের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় হিন্দু কলেজ। কালে কালে সেটাই পরিচিত হয় বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি নামে। যদিও এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য মোটা অঙ্কের অনুদান দিয়েছিলেন এক মুসলিম নবাব। হায়দ্রাবাদের তৎকালীন নিজাম মীর ওসমান আলি খান ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মূল্যে নগদ ১ লক্ষ টাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির স্বার্থে দিয়েছিলেন।
তখনকার সময়, কোনও ধর্মের কথা কারোর মাথায় এসেছিল কিনা, জানা যায় না। ১৯৩৯ সালে টাকা দেওয়ার সময় নিজামের ধর্ম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল কিনা, বিক্ষোভ হয়েছিল কিনা, সেটাও অবশ্য অজানা ইতিহাসের।