পাঞ্জাবে কংগ্রেস খাচ্ছিল তাঁত বুনে, কাল হল সিধুকে এনে,
রাহুলদের ঔদ্ধত্য ‘গান্ধারী’ সোনিয়া নির্বাক

0

Last Updated on October 2, 2021 3:05 AM by Khabar365Din

৩৬৫ দিন। গৌতম লাহিড়ী। নয়াদিল্লি । পাঞ্জাবে ‘খাচিছলো’ কংগ্রেস ‘তাঁত’ বুনে। বিপদ ঘটলো ‘সিধু এনে’। স্বতঃসিদ্ধ পুনরায় প্রমাণিত। কংগ্রেসের প্রধান শত্রু ‘কংগ্রেস’। বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। বাস্তব পরিস্থিতি ছিল- কংগ্রেসের প্রায় কোনো বিকল্প ছিল না। প্রধান বিরোধি অকালি দল কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জনমানসে কোণঠাসা। দিল্লির আম আদমি পার্টি জমি খোঁজার জন্য মরীয়া। এমন অবস্থায় রাহুল গান্ধি-প্রিয়াংকাদের ‘শিশু সুলভ বিশৃঙ্খলা’য় সিদ্ধান্ত নিলেন ভোটের আগে কিরকেটার কাম-টিভি স্টার কাম হাস্যকৌতুক নবজ্যোত সিং সিধুকে দুদে মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিং-এর মাথায় বসিয়ে দিতে হবে। গান্ধি পরিবার ব্যতিরেকে সকলেই বিশ্বাস করেন, ‘ওঁরা ড্রইং রুমে বসে খেলনা গড়েন আবার ভেঙ্গে দেন। ক্যাপ্টেনকে রাহুল রা মোটেই সহ্য করতেন না। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময়ে ক্যাপ্টেন পরায় হুমকি দিয়ে বসেছিলেন, যদি তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করা না হয় তাহলে দলছেড়ে নিজেই দল গড়বেন। যা আজ প্রায় সত্য হতে চলেছে। তখন নিরূপায় হয়ে গান্ধিরা ক্যাপ্টেনকে মেনে নিতে বাধ্য হন। মনে মনে ভেবেই রেখেছিলেন উচিত সময়ে শিক্ষা’ দেবেন। এবারই সেই শিক্ষা দিতে গিয়ে ‘ন্যাজেগোবড়ে’।

২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে গোহারার পরে কংগ্রেস সংসদীয় দল সিদ্ধান্ত নিলেন ক্যাপ্টেনকে উপনেতা করা হবে। উনি বিজেপির অর্থমন্ত্রী অরূণজেটলিকে হারিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মোটেই সন্তুষ্ট হননি। তিনি একদিনের জন্য পার্লামেন্টে আসেননি। নির্বাচনের মুখে সিধু ও আবদার করে চলেছিল, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী প্রজেক্ট করা না হলে সেও দল ছাড়বে। মুলত প্রিয়াংকার চাপেই সিধুকে পাঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করে দেওয়া হলো। অনেকটা ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর বাঁচে। ক্যাপ্টেন মোটেই পছন্দ করেন না সিধুকে। রোজই তাঁদের মধ্যে বাক্য ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় হয়। সিধু করমাগত চাপ দিয়ে চলেছেন ক্যাপ্টেনকে সরাতেই হবে। এবার রাহুল প্রিয়াংকা ময়দানে নেমে কার্যত কাপ্টেনের বিরূদ্ধে বিদ্রোহতে মদত দিলেন। এটা ঘটনা যে পাঁচ বছরের মধ্যে মহারাজ মানসিকতার ক্যাপ্টেনের সংগে দলের বিধায়কদের দুরত্ব বাড়ছিল। তিনি নিজের বিষয়ে এতোই প্রত্যয়ী যে কাউকেই পাত্তা দিচিছলেন না। যদি ক্যাপ্টেনকে মুখ্যমন্ত্রীর গদি থেকে সরাতেই হয়, তাহলে তাঁকে সংগে নিয়ে করলে কি অসুবিধা হতো? তা নয়। আদতে এবার মোদী :শাহরা অ্যান্টি ইনকাম্বেসির জন্য মুখ্যমন্ত্রী হঠানো শুরু করলেন। উত্তরাখন্ড-কণাটক-শেষে গুজরাটও। রাহুল নিজে দলের সভাপতি নন। হবেন কিনা তাও নিশ্চিত নয়। তবু এখনও পর্যন্ত দলে শেষ কথা। মা সোনিয়া গান্ধারীর মতো অপত্য স্নেহে নীরব। বাহুল সিদ্ধান্ত নিলেন এবার মৌকা। ক্যাপ্টেনকে জবাব দেওয়া যাবে। প্রবীণ নেতাদের অপমান করার সহজাত প্রবণতা রয়েছে এঁদের মধ্যে। তাই তো দলে এতো অসন্তোষ। মুখ্যমন্ত্রী বদল হলো। রাহুল রা সিধুকে কুর্সি দিলেন না। পাঞ্জাবে ৩২-৩৩ শতাংশ দলিত ভোটের কথা মাথায় রেখে রীতিমতো চমক। এই প্রথম দলিত মুখ্যমন্ত্রী চরণ জিত সিং চান্নি। সিধু তো এমন ভাবে হাত ধরলেন চান্নির যেন তিনিই তাঁর প্রধান গুরূ। এটা মোটেই পছন্দ হলো রাহুল-প্রিয়াংকাদের। এতো বড় আস্পর্ধা? করলাম আমরা । আর ও কেরডিট নিচছে? মুখ্যমন্ত্রি চান্নিকে দিল্লি তলব করলেন। রাহুল প্রিয়াংকা। মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন – ‘এবার সিধুকে একটু শায়েস্তা করুন।’ ঐ যে আগে বলেছিলাম। এঁরা খেলনা গড়েন আবার নিজেরাই ভাঙ্গেন।

মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্য নিলেন। বেছে বেছে সিধু বিরোধিদের। ব্যস? আগুণে ঘি। এবার অপমানিত সিধু পাল্টা ব্ল্যাকমেইল করতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থেকে টাইট করে পদত্যাগ করলেন। পাঞ্জাবে গোটা ব্যাপারটা ঘেঁটে ঘ। রাহুল প্রমাদ গুণে পাড়ি দিলেন লায়। প্রিয়াংকা উত্তরপ্রদেশে। তাঁরাও খেপে ল। সিধুর এতো বড় হিম্মত। ক্যাপ্টেন বরাবরই বলছিলেন- সিধু অত্যন্ত অস্থির মতি। সিধুর ইস্তফা শুণে বললেন- “আগেই তো বলেছিলাম। ও মেন্টালি স্টেবল নয়।” ক্যাপ্টেন তো সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন কংগ্রেস ত্যাগ করবেন। হয়তো নিজেই দল গড়বেন। তারমধ্যে বাঁদরের পিঠে ভাগের মতো কার্ণিসে অপেক্ষা করছে বিজেপি। যারা পাঞ্জাবে কোনো প্লেয়ারই নয়। অমিত শাহ মৌকা বুঝে ক্যাপ্টেনকে ডেকে তোয়াছে করছেন। সিধু এবার প্রমাদ গুণেছে। যখন ভাবলো-ক্যাপ্টেন গেরুয়া শিবিরে নোঙর করেছে তাহলে স্থায়ীভাবে শত্রু নিধন। সুতরাং মান-অভিমান ভুলে ফের মুখ্যমন্ত্রীর সংগে সমঝোতা করছে। সিধুর কিরকেট জীবন থেকে রাজনীতি-সবটাই ইউ-টার্নের। ভারতীয় কিরকেট দলে নির্বাচিত হয়েও ক্যাপ্টেন আজহারূদ্দিনের সংগে ঝগড়া করে ইংল্যান্ড সফরে গেলোই না। এখনও পর্যন্ত সাময়িক শাস্তি বটেই। তবে কংগ্রেসের ঘর ভাঙলো। সিধু যদি থেকেই যায়, তাহলে ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here