ত্রিপুরার মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর জানালেন তৃণমূলকে পূর্ণ সমর্থন, ভাজপা বিরোধী জোট অবশ্যই হতে পারে

0

Last Updated on August 3, 2021 10:06 PM by Khabar365Din

আগরতলা থেকে

রিপোর্ট : সৌগত মণ্ডল | ছবি : অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়


৩৬৫দিন। ত্রিপুরার মহারাজা। মহারাজ প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মন। নিজেকে মহারাজ বলার থেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন ত্রিপুরা রাজবংশের ১৮৬ তম উত্তরাধিকারী। এখন সেই রাজত্ব নেই, নেই অতীতের গৌরব মাখানো রাজপ্রাসাদের ওপরে একচ্ছত্র অধিকার। তার পরেও ত্রিপুরার বঞ্চিত জনজাতির মানুষের পাশে দাড়িয়ে রাজমহলের বিলাস ছেড়ে রাজনীতির আঙিনায় নেমেছেন প্রদ্যুৎ। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন ত্রিপুরা কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি। ‌ কিন্তু বাজবার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস খুব একটা উৎসাহী নয় এবং সিপিএম এর সঙ্গে তাল মিল করে চলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলে অভিযোগ করে হেলায় ছেড়ে দিয়েছেন কংগ্রেস রাজ্য সভাপতির পদ। শুধু তাই নয় কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন ত্রিপুরা বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর আগে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের দপ্তর থেকে তাকেই ভাজপা শাসিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পদ অফার করা হয়েছিল বলেও সরাসরি জানালেন তিনি। রাজ পরিবারের সন্তান হিসেবে পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। তাঁর বাবা কীর্তি বিক্রম কিশোর মাণিক্য, ত্রিপুরা রাজবংশের ১৮৫তম এবং শেষ রাজা। সেই পরম্পরায় প্রদ্যোত বংশের ১৮৬তম প্রধান। প্রদ্যোতের দাদা কিশোর দেববর্মার আমলেই এই রাজ্য ভারতভুক্ত হয়। এ সময় ত্রিপুরা চালাতেন মূলত তাঁর মা কাঞ্চন প্রভা দেবী। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পুরোনো রাজবংশ এটা। শত শত বছরের জীবন্ত ইতিহাস রয়েছে এ বংশের। এক কালে খাসিয়া পাহাড় থেকে উত্তর আরাকান পর্যন্ত ছিল তাদের প্রভাব। তিপ্রাদের সেই স্মৃতির প্রতীক প্রদ্যোত। সেই সূত্রেই তিনি এই জনগোষ্ঠীর সর্বশেষ মহারাজা। ২০২৩ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরার রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে কথা বলেছিলাম মহারাজের সঙ্গে।

গ্রেটার তিপ্রা ল্যান্ড

একদিকে মুখ্যমন্ত্রী পদ অন্যদিকে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি পদ ছেড়ে দিয়ে ত্রিপুরার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইনডিজিনাস পিপল বা জনজাতির মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরা ইন্ডিজিনিয়াস প্রোগ্রেসিভ রিজিওনাল অ্যালায়েন্স ( টিআইপিআরএ বা তিপ্রা ) নামে একটা দল গড়েন প্রদ্যোত। সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে তিপ্রা মথা বলে। মথা অর্থ ঐক্য। তিপ্রা-মথা নামের ব্যঞ্জনা ত্রিপুরার ট্রাইবাল সমাজে ইতিমধ্যে ইতিবাচক আবেদন তুলেছে। নবীন দল হিসেবে তিপ্রা ত্রিপুরার ভেতর-বাইরে সব জায়গার ত্রিপুরিদের নিয়ে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড করতে চায়। যার ভরকেন্দ্র হবে ত্রিপুরার এখনকার স্বশাসিত এডিসি এলাকা। তবে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড বানাতে গেলে ত্রিপুরা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাজ্য গঠন করতে হবে এমন কোনো দাবি নেই তাঁর।
স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিতে মহারাজ প্রদ্যুৎ মানিক্যর উত্তর, গ্রেটার তিপ্রা ল্যান্ড হতে হবে এমন কোন কথা নেই নরেন্দ্র মোদির চাইলে সেটাকে মোদি ল্যান্ড নাম দিতে পারেন। কিন্তু সাংবিধানিক নিয়মের মধ্যে থেকে ত্রিপুরার জনজাতি মানুষের জন্য একটা স্বীকৃতি চাই আমরা। সেই স্বীকৃতি অবশ্যই হতে হবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে লিখিত স্বীকৃতি। যদি সেই স্বীকৃতি কেউ না দিল তাহলে আমাদের আন্দোলন চলবে। টাকা বা ক্ষমতার লালসায় কখনো রাজনীতি করিনি। তবে ত্রিপুরা তথা ভারতের রাজনীতিতে আমাদের আন্দোলন মানুষ মনে রাখবেন। আই ওয়ান্ট টু বি রিমেম্বারড।

ত্রিপুরায় তৃণমূল প্রসঙ্গে

আগামী দেড় বছরের মধ্যেই বিপ্লব দেবের সরকারকে উৎখাত করে সরকার করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক। অভিষেকের ত্রিপুরার রাজনীতিতে পদার্পণ নিয়ে কি মনে করেন? প্রদ্যুৎ মানিক্য – অভিষেক যেভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছেন এবং ত্রিপুরায় এসেছেন তাতে আমি অত্যন্ত খুশি। মিঠুন চক্রবর্তী অথবা বাবুল সুপ্রিয় এর মত ফিল্মস্টারদের রাজনীতিতে এসে রাতারাতি নেতা হয়ে যাওয়ার তুলনায় সিরিয়াস পলিটিক্স-এর বেশি প্রয়োজন রয়েছে। অভিষেক ইজ এ ভেরি ব্রাইট পার্সন। দিদির প্রতি পারিবারিকভাবে আমি ভীষণ শ্রদ্ধাশীল। বাংলাতে যেভাবে সিপিএমের দীর্ঘকালের বঞ্চনার রাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দিদি সিপিএমকে খতম করে দিয়েছেন একইভাবে ত্রিপুরাতেও আমার বাবা-মা এবং আমি আন্দোলন চালিয়েছি। দিদি বাংলায় যে দাবি তুলেছিলেন কংগ্রেস সিপিএমের বি টিম, এখানেও তার প্রতিবাদ করে আমি কংগ্রেস ছেড়ে চলে এসেছি। দিদি এবং আমার বাবা দুজনেই একসঙ্গে লোকসভায় সতীর্থ ছিলেন। আমার মায়ের সঙ্গেও দিদির সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো।

ত্রিপুরায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে

অভিষেক যদি ত্রিপুরায় এসেছেন এবং এখানকার সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে চাইছেন, সেটা খুব ভালো। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরায় তৃণমূল এবং তিপ্রা মথা সমঝোতা হতে পারে কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে মহারাজের ঝটিতি উত্তর, হোয়াই নট? তৃণমূল যদি ত্রিপুরার ইন্ডিজিনিয়াস পিপলের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সঙ্গে সহমত পোষন করে, তা একসঙ্গে লড়াই হতেই পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here