Last Updated on February 28, 2021 9:58 PM by Khabar365Din



ব্রিগেড থেকে সায়ন্তী অধিকারী
৩৬৫ দিন। মহাজোটে বিরাট ফাঁটল দেখা দিল ব্রিগেড সমাবেশের দিনেই। শুধু তাই নয়, কংরেড জোটের একাংশ ভেঙে পড়ার জোগাড় হল। ব্রিগেডে জোটের শক্তি দেখাতে গিয়ে একেবারে আইসক্রিমের মতো গোলে গেল সব। প্রকাশ্যে সভা মঞ্চেই অপমানিত হতে হল অধীর চৌধুরী। ধরা পড়ে গেল আইএসএফের সঙ্গেও কংগ্রেসের কোন্দল। বামেরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে গেলেও প্রদীপের আলোর মতো জ্বলজ্বল করছিল ফাটল। ব্রিগেড শুরুর থেকেই রোমাঞ্চকর নাটক প্রত্যক্ষ করল রাজ্য।ময়দানে ব্রিগেড সমাবেশ শুরু হয়ে গেছে, চরচড়ে রোদ মাথার উপর খেলছে। একের পর এক নেতা বক্তৃতা রাখছেন, পালা এল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর। রবিবার নিজের বক্তব্যে জনতাকে উদ্ভুদ্ধ করতে করতেই থামতে হচ্ছিল তাঁকে, কারণ চারিদিকে রব উঠেছিল ‘ভাইজান..ভাইজান…….’ তখনই মঞ্চে উঠছিলেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নেতা আব্বাস সিদ্দিকী। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। তবে গল্পে এল টুইস্ট। তখন মঞ্চে বক্তব্য রত অধীর চৌধুরীকে প্রায় ভুলেই গিয়েছে বামেদের পলিট ব্যুরো সদস্যরা। বিমান বসু থেকে মহম্মদ সেলিম সবাই আহ্বান করতে এগিয়ে এলেন আব্বাসকে। তবে গল্প এখানেই থেমে নেই। অধীর চৌধুরী শুধু বক্তব্য বন্ধই রাখেননি বরং তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। মহম্মদ সেলিম তাঁর কাছে এসে প্রথমে বলে ‘আব্বাস একটু বলে নিক’। এই কথা শুনে বক্তব্য ছেড়েই চলে যেতে চান অধীর। উনি বলেন, হ্যাঁ বলে নিক। আমি আর বলবো না।মাস্কটা খুলে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এই কথার পর অধীর চৌধুরীকে মাস্ক পড়ে নিতেও দেখা যায়। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন বিমান বসু। তারপর বক্তৃতা শুরু করলেও আগের ফর্মে ফিরলেন না অধীর। কোনও রকমে বক্তৃতা শেষ করলেন। শুধু তাই নয়, মাত্র ৩০ মিনিট সভায় বসে বেড়িয়ে যান তিনি। এমনকি আব্বাসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ টুকুও সারলেন না। এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে। তবে কী এই মহাজোট ভাঙল? নাকি ব্রিগেডের মঞ্চেই শেষ এই জোট? এই ঘটনার পর আইএসএফ কংগ্রেস সংঘাত বজায় থাকল। আব্বাস সিদ্দিকীর বক্তব্যও এই সংঘাতের আঁচ পাওয়া গেল মারাত্মকভাবে। বারংবার বাম শিবিরকে বন্ধু বলে উল্লেখ করলেও,আরেক জোট সঙ্গী কংগ্রেসকে কোনওরকমভাবেই বন্ধুত্বের তালিকায় আনলেন না তিনি। বক্তৃতায় বললেন, ভাগীদারি করতে এসেছি, তোষণ করতে আসিনি। ভাগীদারি চাই। আদিবাসী, ওবিসি ও মুসলিমদের হক বুঝে নিতে হবে। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে দরজা খোলা আছে। বামেদের বন্ধু বানিয়ে এবং কংগ্রেসকে দূরে ঠেলে আব্বাস বলেন, বাম শরিকরা যেখানে দাঁড়াবে সেখানে অতীত ভুলে জেতাতে হবে। এদিন মঞ্চে ঘটে যাওয়া ঘটনায় জোটে ফাঁটলের চিত্র পরিষ্কার। এদিনের ব্রিগেডে বামেদের সমর্থকদের চেহারা দেখে অনেকেই হতাশ। কারণ মাঠ জুড়ে শুধুই আইএসএফের ঝান্ডা। শুধু তাই নয় আর কারোর বক্তৃতা শোনার কোনও ইচ্ছাও ছিল না ব্রিগেডে আসা মানুষদের। তাঁদের মুখে একটাই কথা ‘ভাইজান ভাইজান’……ভাইজান ছাড়া কারও কথা শুনতেই চাইনা, এমনই বক্তব্য সমর্থকদের, যা অবশ্য বামেদের ব্রিগেড সমাবেশে প্রথমবার ধরা পড়ল। এদিকে, বামেদের আসল কান্ডারির নামও কেউ করলেন না। তাঁর আদর্শের কথা ঘুরে ফিরে অন্যান্য নেতাদের মুখে এলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর নাম কেউ করলেন না। ব্রিগেডে দেখা গেল না প্রকাশ করাত বা বৃন্দা করাত। যা ৩৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম।