Last Updated on March 22, 2021 9:03 PM by Khabar365Din




সংবাদ সূত্র। নিউজলন্ড্রি.কম
১.
পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে তার ছবি। ২৪ মানুষের মধ্যে তিনিও একজন যিনি প্রধানমন্ত্রী মােদির আবাস যােজনায়। মাথার ওপর ছাদ পেয়েছেন। তাই বাংলার মানুষকে ভাজপাকে ভােট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন, এটাই ছিল বিজ্ঞাপন। অথচ সত্যিটা হল, লক্ষ্মীদেবী এসব কিছুই জানেন না। মাত্র ৫০০ টাকা মাস বাড়াতে এক কামরার ঝুপড়িতে থাকেন। এখন বেজায় মুশকিলে পড়েছেন লক্ষ্মীদেবী। বেশতাে রাজ্য সরকারের একশাে দিনের কাজ করছিলেন বাবুঘাটে। কেউ এসে ছবি তুলে নিয়ে যায়। ব্যাস পরের দিনই পাড়ায় হইচই। সবাই এসে জানাচ্ছে মােদির সঙ্গে ছবি চেপেছে। কিন্তু কিভাবে,কারা আর কেনই বা তার ছবি ছাপল তা লক্ষ্মীদেবী জানেন না। মােদির বিজ্ঞাপনে এই ভাওতাবাজি এবার ফাঁস। করে দিল সর্বভারতীয় একটি বিশ্বাসযােগ্য নিউজ পাের্টাল। মিথ্যা ছবি ও বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাজাের সুনার বাংলা গিমিক কেলেঙ্কারিতে পরিণত হল। সাংবাদিকের সামনে পরিষ্কার জানিয়েছেন লক্ষ্মীদেবী যে, বাবুঘাটে রাজ্য সরকারের ১০০ দিনের কাজ করেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে সেই কাজ শেষ হয়েছে। তখনই কেউ তার ছবি তুলে নেয়। এরপর সব কটি দৈনিকে এক পাতা জুড়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যােজনার বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। যেখানে দাবি করা হয়েছে লক্ষ্মীদেবীর মত আরও ২৪ লক্ষ মানুষ নাকি মাথার ওপর ছাদ পেয়েছেন। তাই লক্ষ্মীদেবী এদের একজন হয়ে ভাজপাকে ভােট দিতে আহবান জানাচ্ছেন। এমন মিথ্যে ফেকবিজ্ঞাপন মােদির গালভরা প্রতিশ্রুতি যে ভাওতাবাজি তা প্রমাণ করল। ভােটের জন্য মরিয়া হয়ে ফেক নিউজের পাশাপাশি ফেক। সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেওয়ার এমন নজির দেশে বিরল।
২.
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে নকল মুখ, এমন ঘটনা শুধু দেশের নয়, বিশ্বে বিরল। এমনটাই বলছেন, আন্তর্জাতিক একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার আর্ট ডিরেক্টর মধুপর্ণা মুখার্জি। তিনি বললেন, বিশ্বের অন্য কোনও দেশে হলে না বলে বিজ্ঞাপনে মুখ ব্যবহারের জন্য বিপুল ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এমন মামলার মুখে পড়েছে কোকাকোলা, জেনিথ কিংবা কসকোর মত বিখ্যাত সংস্থারা। কিন্তু সরকার নিজে মিথ্যা প্রচার করছে, এমন ঘটনা কোথাও ঘটে না।।
৩.
দেয়ার আর থ্রি স্টেপস। ফান্ট,টেল আ লাই, দেন রিপিট ইট থাউজেন্ট টাইমস, থার্ড ইট বিকামস টুথ। হিটলারের ছায়াসঙ্গী জোসেফ গােয়েবলসের গােল্ডেন থিওরি অফ পিউপল বিলিভস – এর এই থিওরি ১৯৩৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বের সব কজন ফ্যাসিস্ট সরকার বেদবাক্যহিসাবে মেনে এসেছে। নরেন্দ্র মােদির প্লানিং আইডভাসররাও এই থিওরি মেনেই গত সাত বছর ধরে তাদের মার্কেটিং ও আইটি টিমকে পরিচালিত করে আসছে। সােশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন সহ সব কটি প্রচার মাধ্যম এই একটাই কাজ করে চলেছে একনাগাড়ে। তা সে সমুদ্রের তলা দিয়েও রাম সেতুর অস্তিত্ব নিয়ে হােক, মহাকাশে ওঁ মহাজাগতিক শব্দের খোঁজ পাওয়া হােক, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে ১৪ ফুটের কাল্পনিক ডেটা কেবলের খোঁজ হােক কিংবা সরকারের নানা প্রকল্পের নকল উদাহরণই হােক, পদ্ধতি সেই এক। আসলে সবটাই নকল, আর ভাওতাবাজি। তা এতটাই গালগল্প যে,অটল আবাস যােজনার বিজ্ঞাপনে যিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, যে বিজ্ঞাপন সারা ভারতের সব কটি সংবাদপত্রে পাতা জুড়ে প্রকাশিত হয়, সেই চরিত্রটাই নকল। মােদি গলা ফাটিয়ে বলে বেড়ান, দাবি করেন ২৪ লক্ষ মানুষকে আবাস যােজনায় মাথার ওপর ছাদ দিয়েছেন, দেড় কোটি উজালা গ্যাস দিয়েছেন, ২৪ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ, ১৩ হাজার গ্রামে পানীয় জল দিয়েছেন, এই বিজ্ঞাপন কেলেঙ্কারির পরে এ সব তথ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে গেল। সবটাই কি ভাওতা? তাহলে কি কেজরিওয়াল ২ বছর আগে ঠিকই বলেছিলেন, ২৪ হাজার গ্রামে সত্যিই বিদ্যুৎ পৌঁছলে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশে ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার দরকার, অথচ বেড়েছে ৮ শতাংশ, তাহলে কি শুধু খুঁটি পুঁতেছেন মােদি? ১৩ হাজার গ্রামে পানীয় জল পৌঁছলে গড়ে ৩৩ লক্ষ কিলােমিটার পাইপ লাইনের প্রয়ােজন, অথচ ইউনিসেফ এর হিসাবে মাত্র ১০ হাজার পাইপ লাইন পাতার লক্ষমাত্রা রাখা আছে ১০ বছরের জন্য। তাহলে সবটাই হওয়া?