Last Updated on April 28, 2021 9:52 PM by Khabar365Din
অপমান রবীন্দ্রনাথকে, অমর্ত্য সেনকে

পূষন গুপ্ত
১.
ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন যে ভাজপার থিঙ্কট্যাঙ্ক, আমার জানা ছিল না। আমি জানতাম ভাজাের থিঙ্কট্যাঙ্ক হল দেশি/ বিদেশি নামকরা বিজ্ঞাপন ও পিআর এজেন্সি। তারা অ থেকে চন্দ্রবিন্দু সবটাই সাজিয়ে দেয়। বাঙালি শিক্ষিত মানুষের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি থিঙ্কট্যাঙ্ক হত, তাহলে গত ৩ মাস ধরে এই বানিয়ার দল কেন ও এবং কীভাবে বাংলার সংস্কৃতি, আদর্শ ও মনীষীদের প্রায় বলাৎকার করে ছাড়ল, তা বুঝতে পারিনি। এত বড় ফাউন্ডেশন অথচ তার কোনও হােমওয়ার্ক নেই। এত বড় থিঙ্কট্যাঙ্ক অথচ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে বলছেন বিবেকানন্দ ঠাকুর—সেটা ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কতদূর লজ্জার, তা আশা করি বােঝাতে হবে না । এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ড. অনির্বাণ গাঙ্গুলির সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল আমার। বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ, লাল চুলের জয় শ্রীরামরা ওকে ঘিরে নেই, যাদবপুর থেকে পড়াশুনাে করেছেন। আমার মুশকিল হল আমি ডানপন্থী বুদ্ধিজীবী দেখিনি। গৌরকিশাের ঘােষ এবং অম্লান দত্তকে কাছ থেকে দেখেছি। ওরা যে পরিমাণ গরিব মানুষের মঙ্গলের কথা ভাবতেন, তাতে ওদের বামপন্থীই মনে হত। ভেবেছিলাম অনির্বাণ গাঙ্গুলি কড়াধাঁচের ডানপন্থী হবেন। কোথায় কী! তীব্র বিরােধিতা তাে কেবল মমতায়। জ্যোতি বসু, বুদ্ধ ভটচায, সােমনাথ চাটুজ্জের ভূয়সী প্রশংসা করলেন অনির্বাণ। একবার মনে হচ্ছিল উনি ভাজপা না করে সিপিএম করলেও পারতেন। আর তীব্র আক্রমণ বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে। আমার প্রশ্ন ছিল, আপনি আর স্বপন দাশগুপ্ত কোর্ট মেম্বার, আপনারাই তাে বসিয়েছেন ওকে, সরিয়ে দিচ্ছেন না কেন? উনি বললেন, সরানাের অনেক সমস্যা থাকে তবে এটা ঠিক উনি জনবিরােধী হয়ে উঠেছেন। গােপন সমর্থন তৃণমূলকে অথচ সামনে আমাদের নাম বলছেন। বােলপুরের মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আমি বা আমার দল ওর কাজকর্মকে সমর্থন করে না। আমার প্রশ্ন ছিল, জিতলে তাে অনেক কিছু করা সম্ভব কিন্তু ধরুন জিতলেন না, বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই থাকবে। আপনার কী এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লংটার্ম প্ল্যান আছে? দেখলাম অনির্বাণ স্পষ্টবাদী। ছলচাতুরিতে অভ্যস্ত নন। ম্যানডেট না পেলে কিছু করা যায় না। তাছাড়া শুধু আকাদেমিক নয়, আমরা কিন্তু এনকাউন্টারেও বিশ্বাসী। জিতলে উত্তরপ্রদেশে যা করা হয়েছে দরকার হলে এখানেও তাই করা হবে। আমি বললাম, আপনার কাছ থেকে এনকাউন্টার শুনব না। শুনব বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য ফেরানাের পরিকল্পনা, যা বিদ্যুৎ নষ্ট করেছে। উদ্বিগ্ন অনির্বাণ বললেন, ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছি বােলপুরের মানুষ সাড়া দিচ্ছে।
২.
উল্টোদিকে তৃণমূলের দীর্ঘদিনের বিধায়ক চন্দ্রনাথ মুড়ি খেতে খেতে হেসে বললেন, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কাদের লােক গােটা বােলপুর জানে। ওরাই ওঁকে শিখন্ডি করে সব করাচ্ছে এখন সাধু সাজছে। চন্দ্রনাথ মনে করেন বিশভারতীর এই স্বেচ্ছাচারে আশ্রমিক, ব্যবসায়ীদের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি দিদির উন্নয়ন সহজ জয় এনে দেবে।
৩.
এটা জলের মতাে পরিষ্কার যে, ড. অনির্বাণ গাঙ্গুলির মতাে মুষ্টিমেয় শিক্ষিত ভদ্রলােক এই হুব্বা ভাজপায় সম্পূর্ণ আনফিট। এদের রেখে দেওয়া হচ্ছে বটে কিন্তু কোনওদিনই নেতৃত্বে আনা হবে না। নেতৃত্বে হনুমানেরাই থাকবেন। তবে উভয়পক্ষই একটি সার সত্যি কথা বুঝেছেন তা হল, বােলপুরে এবার স্বয়ং রবি ঠাকুরই বদলা নেবেন। ঐতিহ্য বনাম এনকাউন্টার—কে জিতবে, দেখে নেবেন।
ছবি: ইন্দ্রজিৎ রায়